কবিতা
ঠিক যেন প্রতিদিনের মতো,
শিশুরা বসেছিল শ্রেণিকক্ষে,
চোখে স্বপ্ন, মুখে মায়াবী প্রশ্ন।
হঠাৎই আকাশ ফেটে এল গর্জে ওঠা আগুন,
একটি বিমান, হারানো নিয়ন্ত্রণে
ধেয়ে এলো বজ্রের মতো,
মাইলস্টোনের হৃদয়ে জ্বলল ভয়াল পরাজয়।
ফুলের মতো শিশুরা,
যারা জানত জীবন মানে কেবল খেলার নাম,
ছড়া-কবিতার ছায়ায় গড়ে তুলছিল দিন,
তারা হারিয়ে গেল আগুনের উল্কায়।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই
ভস্ম হলো ব্যাগ, খাতা, বইয়ের ছায়া,
ভস্ম হলো কাচের মতো কোমল শরীর—
নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিল ঘড়ি, থেমে যাওয়া সময়।
আর সেই মুহূর্তে,
একজন ক্যাপ্টেন—অভিজ্ঞ, সাহসী,
জীবন দিয়ে ঠেকাতে চাইল মহাবিপর্যয়,
বাঁচাতে চাইল শত প্রাণ, অথচ নিজেই হারিয়ে গেল অগ্নিস্রোতে।
তাঁর চোয়ালে ছিল দায়িত্বের দৃঢ়তা,
তাঁর পতন ছিল এক নিঃশব্দ প্রার্থনা,
যাতে বাঁচে যারা স্কুলঘরের ভিতরে—
তাদের জন্য নিজের জীবন উপহার দিলেন তিনি।
আর সেই শিক্ষিকা—
মাহেরিন ম্যাডামে, তিনি এক নায়িকা,
আগুনকে উপেক্ষা করে, ধোঁয়াকে ছেঁড়ে
বাঁচালেন বিশজন শিশু, নিজের শরীর পুড়িয়ে।
চুল ছেঁড়া, গায়ের চামড়া ঝলসে যাওয়া,
তবুও কোলে তুলে নিলেন ছোট ছোট সন্তানদের,
বললেন, “ওদের কিছু হবে না,
বেঁচে থাকো বাচ্চারা।”
এ এক বীরত্ব, এ এক কান্না,
এ এক প্রতিশ্রুত শোকের স্তব,
যেখানে ফুল ঝরে গেল, তবু সুবাস রেখে গেল,
যেখানে মৃত্যু হলো, কিন্তু মমতা বেঁচে রইল।
মাইলস্টোন আজ নিস্তব্ধ,
তবু বাতাসে ভেসে আসে এক চিৎকার—
“আমরা এসেছিলাম শিখতে, কেন হারিয়ে গেলাম?”
আর প্রতিধ্বনি তোলে দেয়াল—“ক্ষমা করো, প্রিয় শিশুরা…”