জাতীয় দলের হয়ে আবার খেলবেন কিনা—এই প্রশ্নের জবাবে সাকিব আল হাসান পুরোপুরি নিরুত্তর। সম্প্রতি গ্লোবাল সুপার লিগে খেলতে গায়ানায় অবস্থান করা এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশ দলের বর্তমান পারফরম্যান্স নিয়ে বিস্তারিত কথা বললেও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খোলেননি একটিবারও।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সূত্রে শোনা যাচ্ছে, সাকিবকে জাতীয় দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামও সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, তিনি সাকিবের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সাকিবের সঙ্গে বিসিবির কোনো পর্যায়েই আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ হয়নি। এমনকি কিছুদিন আগে সাকিব নিজে বিসিবি সভাপতিকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অনিশ্চয়তার আবহ
সাকিবের জাতীয় দলে ফেরার পথ একদিকে যেমন ক্রিকেটীয় সক্ষমতার প্রশ্নে সংশয় তৈরি করছে, তেমনি আরও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা আইনি অভিযোগগুলো। গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতিতে সাকিবের নামেও একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। রয়েছে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে, যা তাঁকে দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে থেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেওয়া কতটা নৈতিক বা আইনগত—তা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। দেশের আরেক সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান বর্তমানে কারাগারে, অন্যদিকে মাশরাফি বিন মুর্তজা লোকচক্ষুর অন্তরালে—এমন প্রেক্ষাপটে সাকিবের ফেরার বিষয়টি নিছক ক্রিকেট নয়, একটি রাজনৈতিক এবং নৈতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বোর্ডের সিদ্ধান্তেই কি হবে সমাধান?
বিসিবি যে সাকিবকে ফেরাতে চায়, তা বোঝা গেলেও পুরো বিষয়টি কেবল বোর্ডের সিদ্ধান্তে নির্ভর করছে না। বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ যেমন বলেছিলেন, আইনি জটিলতা না কাটলে জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব নয়। আইনি বাধা কাটিয়ে সাকিব যদি নিজেই দায়মুক্তি পান, কিংবা রাষ্ট্র যদি তাঁকে বিশেষ ব্যবস্থায় সেই সুযোগ দেয়, তাহলে হয়তো ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। না হলে, সব কিছু মিলিয়ে এটি এখন অসম্ভব বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্সেও প্রশ্ন
এক বছরের বেশি সময় জাতীয় দলের বাইরে থাকা সাকিব বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো ম্যাচ খেলছেন না, নেই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও। গায়ানায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেললেও তাঁর ফিটনেস ও ফর্ম সম্পর্কে বিসিবির নির্বাচকদের হাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তাঁকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচকদের কাছে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি, যা বর্তমানে নেই।
জনপ্রিয়তা পুঁজি করা হচ্ছে?
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, সাকিবের মতো তারকাকে নিয়ে এ ধরনের আলোচনা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর একটি কৌশল হতে পারে। বিসিবির সামনের নির্বাচন, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিব–ভক্তদের সক্রিয়তা—সব মিলে একটি কৌশলী প্রচার চালানো হচ্ছে বলেই তাঁদের ধারণা। এটি যেন দেশের ক্রিকেটামোদীদের বিভ্রান্ত না করে, সে দিকেও নজর দেওয়া দরকার।
সাকিব কী বলছেন?
প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপে সাকিব দল নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কা সফরের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে তিনি আগামী এক বছরে বাংলাদেশ দলকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নিজের প্রসঙ্গে একেবারেই নিশ্চুপ থেকেছেন। তাঁর ভাষায়, “নিজেকে নতুন বিতর্কে জড়াতে চাই না।”