দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের জেরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সম্পর্ক। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ব্যাংকক।
থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্তবর্তী সুরিন, উবন রাতচাথানি ও শ্রিসাকেত প্রদেশে কম্বোডিয়ার হামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক মানুষ এবং একজন সেনাসদস্য। আহত হয়েছেন আরও ৩১ জন। বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কম্বোডিয়া সরকার তাদের পক্ষের কোনো হতাহতের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি। তবে তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার একটি সড়কে দুটি বোমা ফেলে। থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রিচা সুকসুওয়ানন রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের একটি এফ-১৬ কম্বোডিয়ার একটি সামরিক স্থাপনায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।”
দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে ‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত সীমান্ত এলাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এলাকাটিতে অবস্থিত প্রাচীন মোয়ান থম মন্দির ঘিরেই নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। আজ গোলাগুলির সূত্রপাতও হয় এই মন্দিরের কাছাকাছি এলাকায়। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, সীমান্তে নজরদারি চালাতে ড্রোন পাঠানোর কারণে কম্বোডিয়া আগ্রাসী আচরণ শুরু করে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার দাবি, থাই সেনাবাহিনী চুক্তি লঙ্ঘন করে তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে।
এ ঘটনার পর উভয় দেশ সীমান্ত এলাকায় নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। থাইল্যান্ডের সরকার জানায়, তারা অন্তত ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে। একইসঙ্গে কম্বোডিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্প্রতি সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে উভয় দেশ। মে মাসে এক সংঘাতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের হুমকি দেয় এবং নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয়। এতে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, “আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই বিরোধের সমাধান চাই।” অপরদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী, কিন্তু যদি আমাদের ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালানো হয়, তবে জবাব সামরিকভাবেই দিতে হবে।”
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতি এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আসিয়ানভুক্ত দেশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।”
সীমান্তে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। আন্তর্জাতিক মহল এই সংঘাতের দ্রুত অবসান ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।