গোপালগঞ্জ জেলায় চলছে যৌথবাহিনীর টানা অভিযান। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক সমাবেশে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান শুরু হয়। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চলছে গ্রেফতার ও তল্লাশি। শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এতে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্কের পরিবেশ। গ্রেফতারের ভয়ে বহু পুরুষ এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের জেলায়, অনেক গ্রাম হয়ে পড়েছে কার্যত পুরুষশূন্য।
শনিবার দুপুরে হরিদাসপুর গ্রামের কাঁচাবাজারে দেখা মেলে গৃহবধূ রেহানা বেগমের। তিনি জানান, “আমার স্বামী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দুই দিন আগে বাড়ি এসেছেন। পরিস্থিতি দেখে তাকে বাজারে যেতে দেইনি। বাধ্য হয়ে আমি বাজার করতে এসেছি।”
কণ্ঠে উদ্বেগ নিয়ে তিনি আরও বলেন, “এই অবস্থা কতদিন চলবে জানি না। স্বামীকে যদি ধরে নিয়ে যায়, চাকরিটাও থাকবে না। ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে।”
শহরের ঘুল্লিবাড়ি মোড়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মো. শহিদুল জানান, “আমার একমাত্র ছেলে খুলনা মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে পড়ে। কিছুদিন আগে ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছে। পরিস্থিতি দেখে আজই তাকে খুলনায়, তার নানা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন কিছুটা নিশ্চিন্ত।”
এমন আতঙ্ক শুধু শহরে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। গোপালগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভেন্ডার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, “ছেলেটা কলেজে পড়ে। প্রতিদিন ভাবি, কখন কি হয়ে যায়। এজন্য রাতে তাকে বাড়িতে ঘুমাতে দিচ্ছি না। এই অবস্থা কতদিন চলবে, বুঝতে পারছি না।”
তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, “যারা নির্দোষ, তারা যেন হয়রানির শিকার না হন—এটা নিশ্চিত করা জরুরি।”
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সভাপতি ড. রাজিউর রহমান জানান, এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪টি মামলা হয়েছে, এবং আরও কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রতিটি মামলাতেই বহু অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই ধারা চলতে থাকলে অচিরেই দেখা যাবে, প্রতিটি পরিবার থেকেই কাউকে না কাউকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এটা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করবে।”