নিজস্ব প্রতিবেদক
অবৈধ অনলাইন ক্যাসিনো, মাদক ও চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে পরিচিত সেলিম মিয়া ওরফে সেলিম প্রধানকে রাজধানীর বারিধারা থেকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতের এ অভিযানে তার সঙ্গে আরও নয়জনকে আটক করা হয়। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের বাসিন্দা সেলিম প্রধানের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর পশুর খাটাল, মাদক সিন্ডিকেট, হোটেল, স্পা ও ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও অনুমোদনহীন ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন তিনি।
সূত্র মতে, থাইল্যান্ড থেকে অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন সেলিম। অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে জুয়াড়িদের আকৃষ্ট করতেন এবং এর মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করতেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার গোপন ক্যাসিনো ও স্পা সেন্টারে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলত।
সেলিম প্রধান রূপালী ব্যাংক থেকে শিল্প স্থাপনের নামে ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তার নামে থাইল্যান্ডে সাতটি কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের চারটি ব্যাংকে ‘কয়েক কোটি’ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। বর্তমানে তার অর্ধশতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে দুদক।
ঋণ জালিয়াতির টাকায় তিনি জাপানে স্থায়ী আবাস গড়েছিলেন। কিন্তু অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টোকিও থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এক আমেরিকান নারীকে বিয়ে করেন এবং তার মাধ্যমে ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে গুলশানে একটি স্পা সেন্টার ঘিরে নতুন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন।
সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বার ও ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লারে ভিআইপি গ্রাহকদের জন্য নারী সরবরাহের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনেও জড়িত ছিলেন তিনি।
অবৈধ সম্পদ ও অর্থপাচারের মামলায় চার বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলেও সেলিম প্রধান গত বছর রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার প্রার্থিতা বাতিল করেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সেলিম প্রধানের রয়েছে পাঁচ স্ত্রী— একজন রাশিয়ান, একজন আমেরিকান, একজন জাপানি এবং দুইজন বাংলাদেশি। এর মধ্যে তার পঞ্চম স্ত্রী বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সহকারী কাস্টমস কমিশনার হিসেবে কর্মরত।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার জানান, অনলাইন ক্যাসিনো ও গোপন আস্তানা থেকে সেলিম প্রধান কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি সীমান্ত এলাকায় পশুর খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুধু চাঁদা বাবদই গত দুই বছরে সীমান্ত অঞ্চল থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা আয় করেছেন বলে জানা গেছে।