নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ ও প্রগতিশীল চিন্তার অন্যতম পুরোধা অধ্যাপক যতীন সরকার (৮৯) আর নেই। আজ বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ছেলে সুমন সরকার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত জুন মাসে ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে তিনি কিডনিসংক্রান্ত জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। কয়েক দিন আগে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ময়মনসিংহ জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ বাহার মজুমদার জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ জেলা উদীচী কার্যালয়ে নেওয়া হবে, যেখানে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। পরে মরদেহ নেত্রকোনার নিজ বাড়িতে নেওয়া হবে এবং সেখানেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যতীন সরকার। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
লেখক হিসেবে তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেন।
৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা শেষে ২০০২ সালে অবসর নিয়ে তিনি স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে নেত্রকোনায় ফিরে আসেন। রেখে গেছেন ছেলে সুমন সরকার, মেয়ে সুদীপ্তা সরকারসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী।
ছাত্রজীবনে লেখালেখি শুরু করলেও তাঁর প্রথম গ্রন্থ সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। জীবদ্দশায় তিনি অর্ধশতাধিক বই রচনা ও বহু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিষয়ক তত্ত্বমূলক ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
যতীন সরকারের মৃত্যুতে নেত্রকোনা উদীচী, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করেছে।