সাহিত্যিক উৎকর্ষের আহ্বান তরুণদের প্রতি
সিটি ব্যাংক নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২৪’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পাঁচ তরুণ কবি ও লেখককে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সম্মানিত করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক, চিন্তক ও শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তরুণ সাহিত্যিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলা সাহিত্যের ভাষা ও গুণগত মান দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। ভাষার অপব্যবহার আমাদের সাহিত্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই অবক্ষয় রোধে তরুণদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে—তাঁদের লেখনীর মধ্য দিয়ে ভাষাকে সমৃদ্ধ করে সাহিত্যকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কালি ও কলম সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন কালি ও কলম–এর প্রকাশক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে সাম্প্রতিক বিমান বিধ্বস্ত দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এবারের পুরস্কারপ্রাপ্তরা: অস্ট্রিক ঋষি – সতীতালয় কাব্যগ্রন্থের জন্য (কবিতা), সাজিদ উল হক আবির – নির্বাচিত দেবদূত গল্পগ্রন্থের জন্য (কথাসাহিত্য), মুহাম্মদ ফরিদ হাসান – শতবর্ষে চা-শ্রমিক আন্দোলন: ডেডলাইন ২০ মে ১৯২১ গ্রন্থের জন্য (প্রবন্ধ ও গবেষণা), স্বরলিপি – একাত্তরের অবরুদ্ধ দিনের দুঃসাহস: সাগাই ফোর্ট এস্কেপ গ্রন্থের জন্য (মুক্তিযুদ্ধ ও বিপ্লব বিষয়ক সাহিত্য), নিয়াজ মাহমুদ – তিলকুমারের যাত্রা গ্রন্থের জন্য (শিশু-কিশোর সাহিত্য)
তাঁদের হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও সম্মাননার চেক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “পুঁজিবাদের শোষণ ও প্রযুক্তির দাপটে আজ সৃজনশীলতা ও মানবতা হুমকির মুখে। সাহিত্যই পারে এই সংকট থেকে আমাদের মুক্তি দিতে—কারণ সাহিত্য কেবল কল্পনার বাহন নয়, এটি মানবিকতার আশ্রয়স্থল।”
মাসরুর আরেফিন বলেন, “এই সময়টা লেখকদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। নানা ধরনের ভীতি, চাপ ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তাঁদের চলতে হচ্ছে। যারা সত্যিকার লেখক হতে চান, তাঁদের সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এগোতে হবে। কালি ও কলম-এর এই মহতী উদ্যোগের সঙ্গে সিটি ব্যাংক সবসময় থাকবে।”
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “২২ বছর ধরে কালি ও কলম নিয়মিতভাবে সাহিত্যচর্চার জগতে আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে। তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করতেই ২০০৮ সাল থেকে এই পুরস্কারের সূচনা। আজও এই উদ্যোগ তাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “লিখতে চাইলে আগে পড়তে হবে। এখনো পর্যন্ত পাঠের কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি। সাহিত্যের শক্তিই সমাজকে দুঃসময় পেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।”
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে গান পরিবেশন করেন কৃষ্ণকলি ও তাঁর সংগীত দল। শুরু হয় রবীন্দ্রসংগীত ‘আকাশভরা সূর্য-তারা’ দিয়ে, যা পুরো মিলনায়তনকে এক আবেগঘন পরিবেশে ভরিয়ে তোলে।