রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান আচমকাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মূল ভবনে বিধ্বস্ত হয়, যার ফলে মুহূর্তেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানজুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক, ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার।
আইএসপিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মর্মান্তিক এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ জন, যাঁদের অধিকাংশই ছাত্র-ছাত্রী। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৫ জন, যাঁদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ক্লাস চলছিল। অনেক শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরেই ছিল। আকস্মিকভাবে আকাশ থেকে আগুন ধেয়ে এলে ভবনের একটি অংশ মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। শিক্ষার্থীরা দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে, চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে কান্না ও আর্তনাদ।
তদন্ত কমিটি গঠন
ঘটনার পরপরই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন:
১. উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম
২. প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার
৩. কো-অর্ডিনেটর লুৎফুন্নেসা লোপা
৪. অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মোল্লা (শিক্ষার্থী: যাইমা জাহান, চতুর্থ শ্রেণি)
৫. শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মারুফ বিন জিয়াউর রহমান ও মো. ভাসনিম ভূঁইয়া প্রতিক (দ্বাদশ শ্রেণি)
তাদেরকে সরাসরি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য যাচাই করে নিহত ও আহতদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঠিকানাসহ প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক আকাশে স্বপ্ন, এক মুহূর্তে ধ্বংস
স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “আমরা ভাবতেই পারিনি আকাশ থেকে এমন মৃত্যু নামতে পারে। শিশুদের চোখে ছিল স্বপ্ন, আর মুহূর্তেই তারা চলে গেল চিরতরে।”
পরিবারের কান্না আর সহপাঠীদের শোক ছাপিয়ে গেছে শব্দের সীমা। মাইলস্টোনের ক্যাম্পাস এখন শুধুই এক করুণ বিষাদের প্রতিচ্ছবি।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেবল এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি নয়, বরং পুরো জাতির জন্য এক শোকাবহ অধ্যায়। এখন প্রয়োজন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।