বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে এখন ‘গণতন্ত্রের সংকট’ প্রকটভাবে দৃশ্যমান, আর এই সংকট মোকাবেলায় সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, শিরোনাম ছিল—‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে গণতন্ত্র উত্তরণের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের আরও বেশি সজাগ ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানাব—যদি আগামীতে জনগণের সমর্থনে সরকার গঠন করেন, তাহলে প্রথম কাজ হওয়া উচিত শহীদদের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করছি, যাতে এই পরিবারগুলোকে বাস্তব সহায়তা দেওয়া যায়।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,
“আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের’ চেষ্টা চলছে। আমরা ইনশাল্লাহ এটা রুখে দেব, যেন দেশে একটি স্বচ্ছ ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আমার এলাকায় দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর পর আবার মিছিল হচ্ছে। দেখি—আওয়ামী লীগের পরিচিত মুখরা এসব মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। এটা যেন নাটক না হয়। আমরা স্পষ্ট করে বলছি—একদিকে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে, অন্যদিকে তাদের নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিল। বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপির ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির’ আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী।
এছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা এবং গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতালে জামায়াত আমিরকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল
অসুস্থ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে দেখতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার রাতে তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জানা গেছে, শনিবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে মঞ্চে পড়ে যান ডা. শফিকুর রহমান। পরে তাকে দ্রুত ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। জামায়াতের প্রচার বিভাগ জানিয়েছে, তার প্রেশার ও সুগার এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান অসুস্থ হলেও সমাবেশে নিজের সমাপনী বক্তব্য মঞ্চেই বসে শেষ করেন। জামায়াত জানিয়েছে, তার দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করা হয়েছে।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ শুরু হয়। সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক অংশ পরিচালনা করে। দুপুরে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মূল পর্ব শুরু হয়, এবং বিকাল ৫টার দিকে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।