BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
    • জাতীয়
    • ঢাকা
    • চট্টগ্রাম
    • খুলনা
    • রাজশাহী
    • বরিশাল
    • সিলেট
    • রংপুর
    • ময়মনসিংহ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • মতামত
  • ফিচার
    • শিল্পসাহিত্য
      • কবিতা ও ছড়া
      • গল্প
      • প্রবন্ধ-আলোচনা
      • রম্য
      • শিশুসাহিত্য
      • শিল্পসাহিত্যের খবর
    • তথ্যপ্রযুক্তি
    • লাইফস্টাইল
    • ট্যুরিজম
  • অপরাধ আইন আদালত
  • রাজনীতি
  • স্বাস্থ্য
BDOUTLOOK
Friday | July 18 | 2025
  • হোম
  • দেশ
    • জাতীয়
    • ঢাকা
    • চট্টগ্রাম
    • খুলনা
    • রাজশাহী
    • বরিশাল
    • সিলেট
    • রংপুর
    • ময়মনসিংহ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • মতামত
  • ফিচার
    • শিল্পসাহিত্য
      • কবিতা ও ছড়া
      • গল্প
      • প্রবন্ধ-আলোচনা
      • রম্য
      • শিশুসাহিত্য
      • শিল্পসাহিত্যের খবর
    • তথ্যপ্রযুক্তি
    • লাইফস্টাইল
    • ট্যুরিজম
  • অপরাধ আইন আদালত
  • রাজনীতি
  • স্বাস্থ্য
ভিডিও
BDOUTLOOK
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
    • জাতীয়
    • ঢাকা
    • চট্টগ্রাম
    • খুলনা
    • রাজশাহী
    • বরিশাল
    • সিলেট
    • রংপুর
    • ময়মনসিংহ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • মতামত
  • ফিচার
    • শিল্পসাহিত্য
      • কবিতা ও ছড়া
      • গল্প
      • প্রবন্ধ-আলোচনা
      • রম্য
      • শিশুসাহিত্য
      • শিল্পসাহিত্যের খবর
    • তথ্যপ্রযুক্তি
    • লাইফস্টাইল
    • ট্যুরিজম
  • অপরাধ আইন আদালত
  • রাজনীতি
  • স্বাস্থ্য

News 24 Hours BDOUTLOOK.COM

প্রবন্ধ-আলোচনা

যেন তার সঙ্গে কখনো দেখাই হয়নি :: কাজী জহিরুল ইসলাম

বিডিআউটলুক July 5, 2025
July 5, 2025
শেয়ার FacebookThreadsBluesky
15


বাস থেকে নামলেন/ খানিকটা থামলেন/ তারপর থেমে থেমে/ চললেন তিনি/ দেখে যেন ভাবলাম/ যেন ওর জানি নাম/ মনে হলো আমি এই/ লোকটিরে চিনি। বলুন তো কে এই লোক? চিনতে পারলেন না? আচ্ছা, বলে দিচ্ছি। না, আমি বলবো না, তার কাছ থেকেই শুনি, তিনি নিজেই তার নাম বলে দিচ্ছেনÑ ‘খাতার মলাটে চোখ/ কেটে গেল জিভ/ মলাটের মাঝখানে/ বেশ সোজা টানে টানে/ লেখা আছে নাম তার/ আহসান হাবীব’।
হ্যাঁ, আজ আমরা শুনবো কবি আহসান হাবীবের গল্প। কবি ও সাংবাদিক আতাহার খানের পেন্ডোরা বক্সের ঝাঁপি খুলে আজ বের করে এনেছি চল্লিশের দশকের একজন গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি কবি আহসান হাবীবের নানা কথা।
খুব রাশভারী ব্যক্তিত্ব ছিল হাবীব ভাইয়ের, ছোটখাটো মানুষ, খুব বেশি কথা বলতেন না। মেপে কথা বললেও হাসতেন প্রাণ খুলে। কবিদের খুব ভালোবাসতেন, প্রকৃত কবিদের। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও নিবেদিত সাহিত্য সম্পাদক। বাংলা সাহিত্যে তার মতো দক্ষ, পরিশ্রমী ও সৎ সাহিত্য সম্পাদক বিরল।
ঠিক এইভাবেই আমাদের আজকের আলাপচারিতা শুরু হয়।
আপনার সঙ্গে হাবীব ভাইয়ের কবে প্রথম দেখা হয়?
সামনা-সামনি দেখা হওয়ার আগের কিছু ঘটনা আপনাকে বলি। আমার বড়ভাই আখতার হোসেন খানের সহপাঠী ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়ি। কবিতা লিখি। সেইসব কবিতা সিরাজী ভাইকে ডাকযোগে ঢাকায় পাঠাতাম। সিরাজী ভাই নিজে গিয়ে দৈনিক পাকিস্তানের সাহিত্য সম্পাদক আহসান হাবীবকে দিতেন। হাবীব ভাই দূর মফস্বলের এক তরুণ কবির কবিতা সাহিত্য পাতায় ছেপে দিতেন। আমরা পাঠ্যবইয়ে আহসান হাবীবের কবিতা পড়েছি। আমাদের কাছে তো তিনি ছিলেন দেবতাতুল্য মানুষ। তার হাত দিয়ে আমার কবিতা ছাপা হচ্ছে, ভেবেই শিহরিত হতাম।
১৯৭০ সালে আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে চলে যাই। দেশ স্বাধীন হবার পর আব্বা টাকা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন, মেডিকেল, প্রকৌশল অথবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য। আমি ঢাকায় এসে দিলু রোডে আমার মামার বাসায় উঠি। ময়মনসিংহে গিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। ঢাকায় ফিরে অপেক্ষা করি বুয়েট এবং মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেবার। এর মধ্যে এক বন্ধু বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টিতে অনেক সুন্দরী মেয়ে পড়ে, চল মেয়ে দেখে আসি। আমি ওর সঙ্গে যাই, সঙ্গে আমার ভর্তির ফাইলপত্রও আছে। গিয়ে দেখি বাংলা বিভাগে ওইদিনই ভর্তি পরীক্ষা। আমি দ্রুত কাগজপত্র তৈরি করে পরীক্ষা দিতে বসে যাই। কবিতা লিখি বলে বাংলার প্রতি তো একটা দুর্বলতা ছিলই। চার ব্যাচে পরীক্ষা হয়। আমার ব্যাচে আমি সর্বোচ্চ নাম্বার পাই। প্রথম হবার একটা আনন্দ এবং গর্ব আছে না? সেই আনন্দে পরদিন গিয়ে বাংলায় ভর্তি হয়ে যাই। একথা শুনে আব্বা ঘোষণা করেন, আমাকে তিনি কোনো টাকা পাঠাবেন না। শুরু হয় আমার কঠিন ও সংগ্রামী জীবন।
তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক কে কে ছিলেন?
ড. আহমদ শরীফ, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক, ড. এনামুল হক, সানজিদা খাতুন।
এদের মধ্যে আপনার প্রিয় শিক্ষক কে বা কারা ছিলেন?
আমার খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং সানজিদা খাতুন।
কবিতা লেখা এবং তা প্রকাশের তাড়না ছিল নিশ্চয়ই।
সাংঘাতিক রকম ছিল। আসলে কবি হবার জন্যই তো বাংলায় ভর্তি হয়েছি। বাংলা বিভাগে আমার সহপাঠী ছিলেন কবি দাউদ হায়দার। দাউদ তখন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকও ছিলেন।
এই সময়টাতেই আপনি দৈনিক বাংলায় যান আহসান হাবীবের সঙ্গে দেখা করতে?
হ্যাঁ, ১৯৭২ সালে, একদিন বিকেলে আমি একাই আমার মামা আব্দুল জলিল মোল্লার দিলু রোডের বাসা থেকে দৈনিক বাংলা পত্রিকা অফিসে যাই। একটাই উদ্দেশ্য কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে দেখা করা। গিয়ে হাবীব ভাইকে পেয়ে যাই। তিনি আমাকে নীরবে অবলোকন করেন। আমি বলি, আমার নাম আতাহার হোসেন খান।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমি তো তোমার লেখা ছেপেছি।
ব্যাস, আমার জন্য তার সান্নিধ্য পাওয়া সহজ হয়ে গেল। খুব বেশি আর পরিচয় দিতে হলো না।
ফরিদপুর থেকে এসেছো?
আমি তো এখন ঢাকায় থাকি হাবীব ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি।
থাকো কোথায়?
আমার মামার বাসায়। দিলু রোডে।
আরে, আমিও তো ওখানেই থাকি। ঠিক আছে, বোসো তুমি। আমার সঙ্গেই বাসায় যাবে।
এভাবে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে যায়। আমি প্রায়ই বিকেলের দিকে যেতাম এবং তাঁর সঙ্গে একই রিকশায় চড়ে ফিরে আসতাম। এতে আমার ফেরার ভাড়াটা বেঁচে যেত। হাবীব ভাই আমাকে মগবাজার মোড়ে নামিয়ে দিতেন, আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসতাম।
এরপর হলে সিট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। প্রথমে বেশ অনেকদিন জহুরুল হক হলের অডিটোরিয়ামের ওপর তলায় খাট ফেলে ছিলাম। কবি মোস্তফা মীর, কবি জাহাঙ্গীরুল ইসলাম আমার সঙ্গে ছিলেন। মাঝে মাঝে আমি মামার বাসায় গিয়ে থাকলে কবি আবুল হাসান এসে আমার বিছানায় ঘুমাতেন। কবিতা ছাপানোই যদিও মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু এছাড়াও হাবীব ভাইয়ের মুখোমুখি বসে থাকতেই কেন যেন খুব ভালো লাগত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাঝে মাঝে হেঁটেই দৈনিক বাংলায় চলে যেতাম।
তখন দৈনিক বাংলায় নিয়মিত ছাপা হত আপনার কবিতা?
হ্যাঁ, হাবীব ভাই বেশ গুরুত্ব দিয়ে আমার কবিতা ছাপতেন। আমার ছন্দ-সচেতনতার বিষয়টিকে তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমি নাম বলবো না, একজন বড় কবি, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক সব পুরস্কারই পেয়েছেন। হাবীব ভাই আমার সামনেই তাকে বলছেন, আপনি এতদিন ধরে কবিতা লেখেন এখনও ছন্দটা ঠিক হলো না কেন? শুধু অক্ষর গুনে লিখলে ছন্দ হয় না, কানটাকে শিক্ষিত করতে হয়। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হচ্ছিলাম আমার সামনেই একজন সিনিয়র কবিকে এভাবে বলছিলেন দেখে।
দৈনিক বাংলায় শুধু কবিতাই লিখতেন নাকি অন্য কিছুও লিখতেন। হাবীব ভাই অন্য কিছু লিখতে বলত না? বুক রিভিউ জাতীয় কিছু?
হ্যাঁ, আমাকে দিয়ে অনেকগুলো বুক রিভিউ করিয়েছেন। সেগুলো মূলত আমাকে কিছু টাকা দেবার জন্যই করাতেন। বাংলায় ভর্তি হয়েছি বলে আব্বা তো আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখন আমি ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক বাংলায় স্পোর্টস রিপোর্ট করতাম। এতে করে বেশ কিছু টাকা আসত। তথ্য অধিদফতরের সচিত্র বাংলাদেশেও স্পোর্টস নিয়ে লিখতাম। একবার হয়েছি কি শোনেন, আমার কাছে খাওয়ার পয়সাও নেই। কী করি? তখন হাঁটতে হাঁটতে জহুরুল হক হল থেকে দৈনিক বাংলায় চলে যাই। গিয়ে হাবীব ভাইকে আমার অবস্থার কথা বলি। তিনি আমাকে পকেট থেকে দশটি টাকা বের করে দেন। তখন কিন্তু দশ টাকা মানে অনেক টাকা। আমার তিন দিনের খাওয়ার পয়সা।
সম্পর্কটা কি শুধু পত্রিকা অফিসকেন্দ্রিকই ছিল, কখনো ওঁর বাসায় যাননি?
গিয়েছি। একবার দুবার না, বহুবার গিয়েছি। হাবীব ভাইয়ের বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই আমাকে খবর দিতেন বা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। কত দিন যে ও-বাসায় খেয়েছি।
মঈনুল আহসান সাবের তখন বোধ হয় ছোট।
হ্যাঁ, ও সম্ভবত স্কুলে পড়ত। মজার ব্যাপার কী জানেন, এত যে ওদের বাসায় গিয়েছি, ওকে সম্ভবত আমি একবার কী দুবার দেখেছি। তাও এক ঝলকের জন্য।
আর ভাবি?
ভাবি ছিলেন অমায়িক মানুষ। মায়ের মতো স্নেহ করে খাওয়াতেন। একটা কথা মনে পড়ল, বলে রাখি, এক পত্রিকায় যেহেতু এক নামে বেশি লেখা দেয়াটা দৃষ্টিকটু এবং হাবীব ভাইকেও সমালোচনায় পড়তে হতে পারে তাই আমি ফরমায়েশি লেখাগুলো ছদ্মনামে লিখতাম।
কী ছিল সেই ছদ্মনাম?
ইবনে বতুতা। এই নামে বুক রিভিউগুলো লিখতাম। কারণ প্রায়ই একই পাতায় আতাহার খানের কবিতাও ছাপা হতো।
কার কার বইয়ের রিভিউ করেছিলেন ইবনে বতুতা মনে আছে?
শুধু কবি ওমর আলীর নামটা মনে আছে। অনেক অচেনা অখ্যাত লেখকের বইয়ের রিভিউও করেছি।
শুনেছি ওমর আলীকে তিনি পছন্দ করতেন।
একটু বেশিই পছন্দ করতেন। হাবীব ভাই মনে করতেন ওমর আলী খুব বড় মাপের কবি প্রতিভা। তিনি ওমর আলীকে আল মাহমুদ, শামসুর রাহমানদের সম পর্যায়ের কবি প্রতিভা মনে করতেন।
দাউদ হায়দার সংবাদে আপনার কবিতা ছাপত না?
খুব গুরুত্ব দিয়ে ছাপত। ওর যে কবিতাটা নিয়ে খুব বিতর্ক হয়, ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়’ যেটাতে যিশু এবং মোহাম্মদকে (সা.) কটুক্তি করে জেল খাটে এবং নির্বাসিত হয়, সেইদিন সাহিত্যের প্রথম পাতায় বক্স করে ছাপা হয় আমার কবিতা? দ্বিতীয় পাতায় ছিল ওর সেই কবিতাটা। ওর কবিতাটা খুব বড় ছিল, আমারটাও ছিল একটা বড় কবিতা।
আহসান হাবীবের সহকারী হিসেবে কবি নাসির আহমেদ চাকরি করতেন। আমি শুনেছি নাসির আহমেদের চাকরির ব্যাপারে আপনি তদবির করেছিলেন।
হ্যাঁ। নাসিরের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৭৬ সালে। আমি তখন ‘দৃষ্টি’ নামক একটি পত্রিকায় কাজ করি। আমাদের পত্রিকার জন্য নতুন প্রেস ঠিক হয় নবাবপুরে। ওখানে গিয়ে দেখি বাঁশের মতো শুকনো এবং কাকের মতো কালো এক ছেলে বসে আছে। ও জানায়, আমার নাম নাসির, আমাদের মালিক এখনো আসেনি, মিরপুর থেকে রওনা দিয়েছেন। কাজটাজ শেষ করে নাসিরকে বলি, চলো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসি। একটা মাছ নিয়ে দুজনে ভাগ করে খাই। সেই থেকে ওর সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে একদিন নাসির আমাকে বলে, আহসান হাবীবের সঙ্গে তো আপনার খুব খাতির, আমাকে তাঁর সহকারী হিসেবে চাকরি দিতে বলেন। আমি নাসিরকে নিয়ে যাই হাবীব ভাইয়ের কাছে। হাবীব ভাই বলেন, তুমি শামসুর রাহমানকে বলো। শামসুর রাহমান তখন সম্পাদক। আমি রাহমান ভাইকে বলি। রাহমান ভাই কবি হিসেবে হাবীব ভাইকে হিংসা করতেন। তিনি বলেন, আহসান হাবীবের কোনো লোককে আমি চাকরি দেব না। নাসির তখন বিনা বেতনে, পত্রিকায় লিখে যে বিল পাওয়া যেত, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করতে থাকে। এরশাদের আমলে কী কারণে জানি শামসুর রাহমানের চাকরি চলে যায় তখন আহমেদ হুমায়ূন সম্পাদক হন। তার সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক ছিল। তার খুব বিশ্বস্ত ছিল রেজোয়ান সিদ্দিকী। আমি রেজোয়ানকে বলি, নাসিরের চাকরিটা দিচ্ছ না কেন? রেজোয়ান আমাকে বলে, নাসিরকে বলবেন রোজ সকালে আমার বাসায় গিয়ে বসে থাকবে এবং অফিসে একবার করে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবে, এভাবে ৩৬৫ দিন করতে পারলে ওর চাকরি হবে।
কী সাংঘাতিক কথা!
যাই হোক। পরে বোধ হয় ওর চাকরিটা হয়।
আহসান হাবীবকে নিয়ে বোধ হয় একটা ফুল পেইজ কভার স্টোরি করেন আপনি, সেটা কী রোববারে না পূর্ণিমায়?
সেটা রোববারে। সম্ভবত সেটিই প্রথম বাংলাদেশে কোনো সাপ্তাহিক পত্রিকায় একজন কবিকে নিয়ে ফুল পেইজ কভার স্টোরি। ১৮ পৃষ্ঠার সেই স্টোরিটা আমি নিজেই লিখেছিলাম, সঙ্গে ছিল হাবীব ভাইয়ের একটা ইন্টারভিউ। এটা করার পরে হাবীব ভাই ভীষণ খুশি হন।
তাকে একটা পুরস্কারও তো দেন আপনি এবং রফিক আজাদ?
শুধু আমি এবং রফিক আজাদ না, রবিউল হুসাইন এবং বেলাল চৌধুরীও ছিলেন। আসলে এই তিনজনের নেতৃত্বে একটা সংগঠন গড়ে ওঠে ‘পদাবলী’ নামে। আমরা রোজ সন্ধ্যায় পদাবলীর সভা করতাম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বাড়িতে। জাফর ভাই তখন ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব। আমাদের প্রথম কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানটি হয় মহিলা সমিতি মঞ্চে। সেটা ছিল দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা। এবং সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। অবশ্য এই টিকিট বিক্রির পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর।
পদাবলী পুরস্কারই তো দেন হাবীব ভাইকে?
হ্যাঁ, আমরা আড্ডা দিতে দিতে ঠিক করি শুধু কবিতা পাঠই নয় আমরা একজন কবিকে পুরস্কারও দিব এবং সেই পুরস্কারের মান হবে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ওপরে। কাকে দেয়া যায় পুরস্কার? আমি প্রস্তাব করি আহসান হাবীবের নাম, সঙ্গে সঙ্গে রফিক আজাদ সমর্থন করেন। আর রফিক আজাদ সমর্থন করা মানে সেটা ফাইনাল। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে হাবীব ভাইকে কথাটা জানানো হয়। তিনি যারপরনাই খুশি হন।
দিয়েছিলেন সেই পুরস্কার?
হ্যাঁ, হাবীব ভাইকে দশ হাজার টাকার একটা চেক দেওয়া হয়। সেই সত্তরের দশকে দশ হাজার টাকা কিন্তু অনেক টাকা।
হ্যাঁ হ্যাঁ, সে তো নিশ্চয়ই। দশ হাজার টাকায় তখন ঢাকার শহরতলীতে চার কাঠা জমি কেনা যেত।
হাবীব ভাই পুরস্কার গ্রহণ করে আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।
পাকিস্তান আমলে আহসান হাবীব ছাড়া আর কার কার কবিতা পাঠ্যপুস্তকে ছিল? মানে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জসীমউদ্দীন ছাড়া।
বেগম সুফিয়া কামাল, র্ফরুখ আহমদ, আবুল হোসেনের কবিতা ছিল।
কখনো কি কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে ঢাকার বাইরে সফরসঙ্গী হয়েছিলেন? তখন তো ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অনেক সাহিত্য সম্মেলন হতো।
ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। খুলনার একটা সংগঠন ছিল কবিতালাপ। আহসান হাবীবসহ আমাদের অনেককে কবিতালাপ পুরস্কার দেওয়া হয়। কবি আহসান হাবীব, কবি রফিক আজাদ, কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বিচিত্রার সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী, কবি শিহাব সরকার এবং আমি বাসে করে যাই খুলনায়। সারা রাস্তা রফিক ভাই আর শাহাদাত চৌধুরী নানান অশ্লীল চুটকি বলে মাতিয়ে রাখেন। হাবীব ভাই হাসতে হাসতে সিট থেকে পড়ে যান। ওদের স্টক শেষ হলে আবু হেনা মোস্তফা কামাল শুরু করেন খুব বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুক। এভাবে সারা রাস্তা আমরা আনন্দ করতে করতে যাই।
কোনো মজার ঘটনা আছে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে?
মজার নয় তবে একটা অদ্ভুত ঘটনা আছে। আমি আজও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি। ইত্তেফাকের সাংবাদিক হিসেবে একটা রিপোর্ট করতে আমি কক্সবাজার যাই। বেশ কয়েকদিন থাকতে হয় ওখানে। আমি রোজ বিকালে ঘণ্টাখানেক সৈকতে হেঁটে বেড়াতাম। একদিন দেখি সৈকতে কবি আহসাব হাবীব, সঙ্গে তার কন্যা কেয়া এবং কেয়ার দুই বাচ্চা। আমি তো হাবীব ভাইকে দেখে খুশিতে ‘হাবীব ভাই’ বলে চিৎকার দিয়ে কাছে যাই। তাকে জড়িয়ে ধরবো এইরকম আবেগ আমার। কিন্তু হাবীব ভাই আমার দিকে তাকালেনই না। মনে হলো তার সঙ্গে আমার কোনোকালে দেখাই হয়নি, তিনি আমাকে চেনেনই না।
হলিসউড, নিউইয়র্ক থেকেযেন তার সঙ্গে কখনো দেখাই হয়নি
কাজী জহিরুল ইসলাম
বাস থেকে নামলেন/ খানিকটা থামলেন/ তারপর থেমে থেমে/ চললেন তিনি/ দেখে যেন ভাবলাম/ যেন ওর জানি নাম/ মনে হলো আমি এই/ লোকটিরে চিনি। বলুন তো কে এই লোক? চিনতে পারলেন না? আচ্ছা, বলে দিচ্ছি। না, আমি বলবো না, তার কাছ থেকেই শুনি, তিনি নিজেই তার নাম বলে দিচ্ছেনÑ ‘খাতার মলাটে চোখ/ কেটে গেল জিভ/ মলাটের মাঝখানে/ বেশ সোজা টানে টানে/ লেখা আছে নাম তার/ আহসান হাবীব’।
হ্যাঁ, আজ আমরা শুনবো কবি আহসান হাবীবের গল্প। কবি ও সাংবাদিক আতাহার খানের পেন্ডোরা বক্সের ঝাঁপি খুলে আজ বের করে এনেছি চল্লিশের দশকের একজন গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি কবি আহসান হাবীবের নানা কথা।
খুব রাশভারী ব্যক্তিত্ব ছিল হাবীব ভাইয়ের, ছোটখাটো মানুষ, খুব বেশি কথা বলতেন না। মেপে কথা বললেও হাসতেন প্রাণ খুলে। কবিদের খুব ভালোবাসতেন, প্রকৃত কবিদের। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও নিবেদিত সাহিত্য সম্পাদক। বাংলা সাহিত্যে তার মতো দক্ষ, পরিশ্রমী ও সৎ সাহিত্য সম্পাদক বিরল।
ঠিক এইভাবেই আমাদের আজকের আলাপচারিতা শুরু হয়।
আপনার সঙ্গে হাবীব ভাইয়ের কবে প্রথম দেখা হয়?
সামনা-সামনি দেখা হওয়ার আগের কিছু ঘটনা আপনাকে বলি। আমার বড়ভাই আখতার হোসেন খানের সহপাঠী ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়ি। কবিতা লিখি। সেইসব কবিতা সিরাজী ভাইকে ডাকযোগে ঢাকায় পাঠাতাম। সিরাজী ভাই নিজে গিয়ে দৈনিক পাকিস্তানের সাহিত্য সম্পাদক আহসান হাবীবকে দিতেন। হাবীব ভাই দূর মফস্বলের এক তরুণ কবির কবিতা সাহিত্য পাতায় ছেপে দিতেন। আমরা পাঠ্যবইয়ে আহসান হাবীবের কবিতা পড়েছি। আমাদের কাছে তো তিনি ছিলেন দেবতাতুল্য মানুষ। তার হাত দিয়ে আমার কবিতা ছাপা হচ্ছে, ভেবেই শিহরিত হতাম।
১৯৭০ সালে আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে চলে যাই। দেশ স্বাধীন হবার পর আব্বা টাকা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন, মেডিকেল, প্রকৌশল অথবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য। আমি ঢাকায় এসে দিলু রোডে আমার মামার বাসায় উঠি। ময়মনসিংহে গিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। ঢাকায় ফিরে অপেক্ষা করি বুয়েট এবং মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেবার। এর মধ্যে এক বন্ধু বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টিতে অনেক সুন্দরী মেয়ে পড়ে, চল মেয়ে দেখে আসি। আমি ওর সঙ্গে যাই, সঙ্গে আমার ভর্তির ফাইলপত্রও আছে। গিয়ে দেখি বাংলা বিভাগে ওইদিনই ভর্তি পরীক্ষা। আমি দ্রুত কাগজপত্র তৈরি করে পরীক্ষা দিতে বসে যাই। কবিতা লিখি বলে বাংলার প্রতি তো একটা দুর্বলতা ছিলই। চার ব্যাচে পরীক্ষা হয়। আমার ব্যাচে আমি সর্বোচ্চ নাম্বার পাই। প্রথম হবার একটা আনন্দ এবং গর্ব আছে না? সেই আনন্দে পরদিন গিয়ে বাংলায় ভর্তি হয়ে যাই। একথা শুনে আব্বা ঘোষণা করেন, আমাকে তিনি কোনো টাকা পাঠাবেন না। শুরু হয় আমার কঠিন ও সংগ্রামী জীবন।
তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক কে কে ছিলেন?
ড. আহমদ শরীফ, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক, ড. এনামুল হক, সানজিদা খাতুন।
এদের মধ্যে আপনার প্রিয় শিক্ষক কে বা কারা ছিলেন?
আমার খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং সানজিদা খাতুন।
কবিতা লেখা এবং তা প্রকাশের তাড়না ছিল নিশ্চয়ই।
সাংঘাতিক রকম ছিল। আসলে কবি হবার জন্যই তো বাংলায় ভর্তি হয়েছি। বাংলা বিভাগে আমার সহপাঠী ছিলেন কবি দাউদ হায়দার। দাউদ তখন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকও ছিলেন।
এই সময়টাতেই আপনি দৈনিক বাংলায় যান আহসান হাবীবের সঙ্গে দেখা করতে?
হ্যাঁ, ১৯৭২ সালে, একদিন বিকেলে আমি একাই আমার মামা আব্দুল জলিল মোল্লার দিলু রোডের বাসা থেকে দৈনিক বাংলা পত্রিকা অফিসে যাই। একটাই উদ্দেশ্য কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে দেখা করা। গিয়ে হাবীব ভাইকে পেয়ে যাই। তিনি আমাকে নীরবে অবলোকন করেন। আমি বলি, আমার নাম আতাহার হোসেন খান।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমি তো তোমার লেখা ছেপেছি।
ব্যাস, আমার জন্য তার সান্নিধ্য পাওয়া সহজ হয়ে গেল। খুব বেশি আর পরিচয় দিতে হলো না।
ফরিদপুর থেকে এসেছো?
আমি তো এখন ঢাকায় থাকি হাবীব ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি।
থাকো কোথায়?
আমার মামার বাসায়। দিলু রোডে।
আরে, আমিও তো ওখানেই থাকি। ঠিক আছে, বোসো তুমি। আমার সঙ্গেই বাসায় যাবে।
এভাবে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে যায়। আমি প্রায়ই বিকেলের দিকে যেতাম এবং তাঁর সঙ্গে একই রিকশায় চড়ে ফিরে আসতাম। এতে আমার ফেরার ভাড়াটা বেঁচে যেত। হাবীব ভাই আমাকে মগবাজার মোড়ে নামিয়ে দিতেন, আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসতাম।
এরপর হলে সিট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। প্রথমে বেশ অনেকদিন জহুরুল হক হলের অডিটোরিয়ামের ওপর তলায় খাট ফেলে ছিলাম। কবি মোস্তফা মীর, কবি জাহাঙ্গীরুল ইসলাম আমার সঙ্গে ছিলেন। মাঝে মাঝে আমি মামার বাসায় গিয়ে থাকলে কবি আবুল হাসান এসে আমার বিছানায় ঘুমাতেন। কবিতা ছাপানোই যদিও মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু এছাড়াও হাবীব ভাইয়ের মুখোমুখি বসে থাকতেই কেন যেন খুব ভালো লাগত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাঝে মাঝে হেঁটেই দৈনিক বাংলায় চলে যেতাম।
তখন দৈনিক বাংলায় নিয়মিত ছাপা হত আপনার কবিতা?
হ্যাঁ, হাবীব ভাই বেশ গুরুত্ব দিয়ে আমার কবিতা ছাপতেন। আমার ছন্দ-সচেতনতার বিষয়টিকে তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমি নাম বলবো না, একজন বড় কবি, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক সব পুরস্কারই পেয়েছেন। হাবীব ভাই আমার সামনেই তাকে বলছেন, আপনি এতদিন ধরে কবিতা লেখেন এখনও ছন্দটা ঠিক হলো না কেন? শুধু অক্ষর গুনে লিখলে ছন্দ হয় না, কানটাকে শিক্ষিত করতে হয়। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হচ্ছিলাম আমার সামনেই একজন সিনিয়র কবিকে এভাবে বলছিলেন দেখে।
দৈনিক বাংলায় শুধু কবিতাই লিখতেন নাকি অন্য কিছুও লিখতেন। হাবীব ভাই অন্য কিছু লিখতে বলত না? বুক রিভিউ জাতীয় কিছু?
হ্যাঁ, আমাকে দিয়ে অনেকগুলো বুক রিভিউ করিয়েছেন। সেগুলো মূলত আমাকে কিছু টাকা দেবার জন্যই করাতেন। বাংলায় ভর্তি হয়েছি বলে আব্বা তো আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখন আমি ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক বাংলায় স্পোর্টস রিপোর্ট করতাম। এতে করে বেশ কিছু টাকা আসত। তথ্য অধিদফতরের সচিত্র বাংলাদেশেও স্পোর্টস নিয়ে লিখতাম। একবার হয়েছি কি শোনেন, আমার কাছে খাওয়ার পয়সাও নেই। কী করি? তখন হাঁটতে হাঁটতে জহুরুল হক হল থেকে দৈনিক বাংলায় চলে যাই। গিয়ে হাবীব ভাইকে আমার অবস্থার কথা বলি। তিনি আমাকে পকেট থেকে দশটি টাকা বের করে দেন। তখন কিন্তু দশ টাকা মানে অনেক টাকা। আমার তিন দিনের খাওয়ার পয়সা।
সম্পর্কটা কি শুধু পত্রিকা অফিসকেন্দ্রিকই ছিল, কখনো ওঁর বাসায় যাননি?
গিয়েছি। একবার দুবার না, বহুবার গিয়েছি। হাবীব ভাইয়ের বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই আমাকে খবর দিতেন বা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। কত দিন যে ও-বাসায় খেয়েছি।
মঈনুল আহসান সাবের তখন বোধ হয় ছোট।
হ্যাঁ, ও সম্ভবত স্কুলে পড়ত। মজার ব্যাপার কী জানেন, এত যে ওদের বাসায় গিয়েছি, ওকে সম্ভবত আমি একবার কী দুবার দেখেছি। তাও এক ঝলকের জন্য।
আর ভাবি?
ভাবি ছিলেন অমায়িক মানুষ। মায়ের মতো স্নেহ করে খাওয়াতেন। একটা কথা মনে পড়ল, বলে রাখি, এক পত্রিকায় যেহেতু এক নামে বেশি লেখা দেয়াটা দৃষ্টিকটু এবং হাবীব ভাইকেও সমালোচনায় পড়তে হতে পারে তাই আমি ফরমায়েশি লেখাগুলো ছদ্মনামে লিখতাম।
কী ছিল সেই ছদ্মনাম?
ইবনে বতুতা। এই নামে বুক রিভিউগুলো লিখতাম। কারণ প্রায়ই একই পাতায় আতাহার খানের কবিতাও ছাপা হতো।
কার কার বইয়ের রিভিউ করেছিলেন ইবনে বতুতা মনে আছে?
শুধু কবি ওমর আলীর নামটা মনে আছে। অনেক অচেনা অখ্যাত লেখকের বইয়ের রিভিউও করেছি।
শুনেছি ওমর আলীকে তিনি পছন্দ করতেন।
একটু বেশিই পছন্দ করতেন। হাবীব ভাই মনে করতেন ওমর আলী খুব বড় মাপের কবি প্রতিভা। তিনি ওমর আলীকে আল মাহমুদ, শামসুর রাহমানদের সম পর্যায়ের কবি প্রতিভা মনে করতেন।
দাউদ হায়দার সংবাদে আপনার কবিতা ছাপত না?
খুব গুরুত্ব দিয়ে ছাপত। ওর যে কবিতাটা নিয়ে খুব বিতর্ক হয়, ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়’ যেটাতে যিশু এবং মোহাম্মদকে (সা.) কটুক্তি করে জেল খাটে এবং নির্বাসিত হয়, সেইদিন সাহিত্যের প্রথম পাতায় বক্স করে ছাপা হয় আমার কবিতা? দ্বিতীয় পাতায় ছিল ওর সেই কবিতাটা। ওর কবিতাটা খুব বড় ছিল, আমারটাও ছিল একটা বড় কবিতা।
আহসান হাবীবের সহকারী হিসেবে কবি নাসির আহমেদ চাকরি করতেন। আমি শুনেছি নাসির আহমেদের চাকরির ব্যাপারে আপনি তদবির করেছিলেন।
হ্যাঁ। নাসিরের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৭৬ সালে। আমি তখন ‘দৃষ্টি’ নামক একটি পত্রিকায় কাজ করি। আমাদের পত্রিকার জন্য নতুন প্রেস ঠিক হয় নবাবপুরে। ওখানে গিয়ে দেখি বাঁশের মতো শুকনো এবং কাকের মতো কালো এক ছেলে বসে আছে। ও জানায়, আমার নাম নাসির, আমাদের মালিক এখনো আসেনি, মিরপুর থেকে রওনা দিয়েছেন। কাজটাজ শেষ করে নাসিরকে বলি, চলো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসি। একটা মাছ নিয়ে দুজনে ভাগ করে খাই। সেই থেকে ওর সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে একদিন নাসির আমাকে বলে, আহসান হাবীবের সঙ্গে তো আপনার খুব খাতির, আমাকে তাঁর সহকারী হিসেবে চাকরি দিতে বলেন। আমি নাসিরকে নিয়ে যাই হাবীব ভাইয়ের কাছে। হাবীব ভাই বলেন, তুমি শামসুর রাহমানকে বলো। শামসুর রাহমান তখন সম্পাদক। আমি রাহমান ভাইকে বলি। রাহমান ভাই কবি হিসেবে হাবীব ভাইকে হিংসা করতেন। তিনি বলেন, আহসান হাবীবের কোনো লোককে আমি চাকরি দেব না। নাসির তখন বিনা বেতনে, পত্রিকায় লিখে যে বিল পাওয়া যেত, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করতে থাকে। এরশাদের আমলে কী কারণে জানি শামসুর রাহমানের চাকরি চলে যায় তখন আহমেদ হুমায়ূন সম্পাদক হন। তার সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক ছিল। তার খুব বিশ্বস্ত ছিল রেজোয়ান সিদ্দিকী। আমি রেজোয়ানকে বলি, নাসিরের চাকরিটা দিচ্ছ না কেন? রেজোয়ান আমাকে বলে, নাসিরকে বলবেন রোজ সকালে আমার বাসায় গিয়ে বসে থাকবে এবং অফিসে একবার করে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবে, এভাবে ৩৬৫ দিন করতে পারলে ওর চাকরি হবে।
কী সাংঘাতিক কথা!
যাই হোক। পরে বোধ হয় ওর চাকরিটা হয়।
আহসান হাবীবকে নিয়ে বোধ হয় একটা ফুল পেইজ কভার স্টোরি করেন আপনি, সেটা কী রোববারে না পূর্ণিমায়?
সেটা রোববারে। সম্ভবত সেটিই প্রথম বাংলাদেশে কোনো সাপ্তাহিক পত্রিকায় একজন কবিকে নিয়ে ফুল পেইজ কভার স্টোরি। ১৮ পৃষ্ঠার সেই স্টোরিটা আমি নিজেই লিখেছিলাম, সঙ্গে ছিল হাবীব ভাইয়ের একটা ইন্টারভিউ। এটা করার পরে হাবীব ভাই ভীষণ খুশি হন।
তাকে একটা পুরস্কারও তো দেন আপনি এবং রফিক আজাদ?
শুধু আমি এবং রফিক আজাদ না, রবিউল হুসাইন এবং বেলাল চৌধুরীও ছিলেন। আসলে এই তিনজনের নেতৃত্বে একটা সংগঠন গড়ে ওঠে ‘পদাবলী’ নামে। আমরা রোজ সন্ধ্যায় পদাবলীর সভা করতাম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বাড়িতে। জাফর ভাই তখন ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব। আমাদের প্রথম কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানটি হয় মহিলা সমিতি মঞ্চে। সেটা ছিল দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা। এবং সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। অবশ্য এই টিকিট বিক্রির পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর।
পদাবলী পুরস্কারই তো দেন হাবীব ভাইকে?
হ্যাঁ, আমরা আড্ডা দিতে দিতে ঠিক করি শুধু কবিতা পাঠই নয় আমরা একজন কবিকে পুরস্কারও দিব এবং সেই পুরস্কারের মান হবে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ওপরে। কাকে দেয়া যায় পুরস্কার? আমি প্রস্তাব করি আহসান হাবীবের নাম, সঙ্গে সঙ্গে রফিক আজাদ সমর্থন করেন। আর রফিক আজাদ সমর্থন করা মানে সেটা ফাইনাল। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে হাবীব ভাইকে কথাটা জানানো হয়। তিনি যারপরনাই খুশি হন।
দিয়েছিলেন সেই পুরস্কার?
হ্যাঁ, হাবীব ভাইকে দশ হাজার টাকার একটা চেক দেওয়া হয়। সেই সত্তরের দশকে দশ হাজার টাকা কিন্তু অনেক টাকা।
হ্যাঁ হ্যাঁ, সে তো নিশ্চয়ই। দশ হাজার টাকায় তখন ঢাকার শহরতলীতে চার কাঠা জমি কেনা যেত।
হাবীব ভাই পুরস্কার গ্রহণ করে আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।
পাকিস্তান আমলে আহসান হাবীব ছাড়া আর কার কার কবিতা পাঠ্যপুস্তকে ছিল? মানে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জসীমউদ্দীন ছাড়া।
বেগম সুফিয়া কামাল, র্ফরুখ আহমদ, আবুল হোসেনের কবিতা ছিল।
কখনো কি কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে ঢাকার বাইরে সফরসঙ্গী হয়েছিলেন? তখন তো ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অনেক সাহিত্য সম্মেলন হতো।
ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। খুলনার একটা সংগঠন ছিল কবিতালাপ। আহসান হাবীবসহ আমাদের অনেককে কবিতালাপ পুরস্কার দেওয়া হয়। কবি আহসান হাবীব, কবি রফিক আজাদ, কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বিচিত্রার সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী, কবি শিহাব সরকার এবং আমি বাসে করে যাই খুলনায়। সারা রাস্তা রফিক ভাই আর শাহাদাত চৌধুরী নানান অশ্লীল চুটকি বলে মাতিয়ে রাখেন। হাবীব ভাই হাসতে হাসতে সিট থেকে পড়ে যান। ওদের স্টক শেষ হলে আবু হেনা মোস্তফা কামাল শুরু করেন খুব বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুক। এভাবে সারা রাস্তা আমরা আনন্দ করতে করতে যাই।
কোনো মজার ঘটনা আছে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে?
মজার নয় তবে একটা অদ্ভুত ঘটনা আছে। আমি আজও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি। ইত্তেফাকের সাংবাদিক হিসেবে একটা রিপোর্ট করতে আমি কক্সবাজার যাই। বেশ কয়েকদিন থাকতে হয় ওখানে। আমি রোজ বিকালে ঘণ্টাখানেক সৈকতে হেঁটে বেড়াতাম। একদিন দেখি সৈকতে কবি আহসাব হাবীব, সঙ্গে তার কন্যা কেয়া এবং কেয়ার দুই বাচ্চা। আমি তো হাবীব ভাইকে দেখে খুশিতে ‘হাবীব ভাই’ বলে চিৎকার দিয়ে কাছে যাই। তাকে জড়িয়ে ধরবো এইরকম আবেগ আমার। কিন্তু হাবীব ভাই আমার দিকে তাকালেনই না। মনে হলো তার সঙ্গে আমার কোনোকালে দেখাই হয়নি, তিনি আমাকে চেনেনই না।
হলিসউড, নিউইয়র্ক থেকেযেন তার সঙ্গে কখনো দেখাই হয়নি
কাজী জহিরুল ইসলাম
বাস থেকে নামলেন/ খানিকটা থামলেন/ তারপর থেমে থেমে/ চললেন তিনি/ দেখে যেন ভাবলাম/ যেন ওর জানি নাম/ মনে হলো আমি এই/ লোকটিরে চিনি। বলুন তো কে এই লোক? চিনতে পারলেন না? আচ্ছা, বলে দিচ্ছি। না, আমি বলবো না, তার কাছ থেকেই শুনি, তিনি নিজেই তার নাম বলে দিচ্ছেনÑ ‘খাতার মলাটে চোখ/ কেটে গেল জিভ/ মলাটের মাঝখানে/ বেশ সোজা টানে টানে/ লেখা আছে নাম তার/ আহসান হাবীব’।
হ্যাঁ, আজ আমরা শুনবো কবি আহসান হাবীবের গল্প। কবি ও সাংবাদিক আতাহার খানের পেন্ডোরা বক্সের ঝাঁপি খুলে আজ বের করে এনেছি চল্লিশের দশকের একজন গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি কবি আহসান হাবীবের নানা কথা।
খুব রাশভারী ব্যক্তিত্ব ছিল হাবীব ভাইয়ের, ছোটখাটো মানুষ, খুব বেশি কথা বলতেন না। মেপে কথা বললেও হাসতেন প্রাণ খুলে। কবিদের খুব ভালোবাসতেন, প্রকৃত কবিদের। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও নিবেদিত সাহিত্য সম্পাদক। বাংলা সাহিত্যে তার মতো দক্ষ, পরিশ্রমী ও সৎ সাহিত্য সম্পাদক বিরল।
ঠিক এইভাবেই আমাদের আজকের আলাপচারিতা শুরু হয়।
আপনার সঙ্গে হাবীব ভাইয়ের কবে প্রথম দেখা হয়?
সামনা-সামনি দেখা হওয়ার আগের কিছু ঘটনা আপনাকে বলি। আমার বড়ভাই আখতার হোসেন খানের সহপাঠী ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়ি। কবিতা লিখি। সেইসব কবিতা সিরাজী ভাইকে ডাকযোগে ঢাকায় পাঠাতাম। সিরাজী ভাই নিজে গিয়ে দৈনিক পাকিস্তানের সাহিত্য সম্পাদক আহসান হাবীবকে দিতেন। হাবীব ভাই দূর মফস্বলের এক তরুণ কবির কবিতা সাহিত্য পাতায় ছেপে দিতেন। আমরা পাঠ্যবইয়ে আহসান হাবীবের কবিতা পড়েছি। আমাদের কাছে তো তিনি ছিলেন দেবতাতুল্য মানুষ। তার হাত দিয়ে আমার কবিতা ছাপা হচ্ছে, ভেবেই শিহরিত হতাম।
১৯৭০ সালে আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে চলে যাই। দেশ স্বাধীন হবার পর আব্বা টাকা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন, মেডিকেল, প্রকৌশল অথবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য। আমি ঢাকায় এসে দিলু রোডে আমার মামার বাসায় উঠি। ময়মনসিংহে গিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। ঢাকায় ফিরে অপেক্ষা করি বুয়েট এবং মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেবার। এর মধ্যে এক বন্ধু বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টিতে অনেক সুন্দরী মেয়ে পড়ে, চল মেয়ে দেখে আসি। আমি ওর সঙ্গে যাই, সঙ্গে আমার ভর্তির ফাইলপত্রও আছে। গিয়ে দেখি বাংলা বিভাগে ওইদিনই ভর্তি পরীক্ষা। আমি দ্রুত কাগজপত্র তৈরি করে পরীক্ষা দিতে বসে যাই। কবিতা লিখি বলে বাংলার প্রতি তো একটা দুর্বলতা ছিলই। চার ব্যাচে পরীক্ষা হয়। আমার ব্যাচে আমি সর্বোচ্চ নাম্বার পাই। প্রথম হবার একটা আনন্দ এবং গর্ব আছে না? সেই আনন্দে পরদিন গিয়ে বাংলায় ভর্তি হয়ে যাই। একথা শুনে আব্বা ঘোষণা করেন, আমাকে তিনি কোনো টাকা পাঠাবেন না। শুরু হয় আমার কঠিন ও সংগ্রামী জীবন।
তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক কে কে ছিলেন?
ড. আহমদ শরীফ, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক, ড. এনামুল হক, সানজিদা খাতুন।
এদের মধ্যে আপনার প্রিয় শিক্ষক কে বা কারা ছিলেন?
আমার খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং সানজিদা খাতুন।
কবিতা লেখা এবং তা প্রকাশের তাড়না ছিল নিশ্চয়ই।
সাংঘাতিক রকম ছিল। আসলে কবি হবার জন্যই তো বাংলায় ভর্তি হয়েছি। বাংলা বিভাগে আমার সহপাঠী ছিলেন কবি দাউদ হায়দার। দাউদ তখন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকও ছিলেন।
এই সময়টাতেই আপনি দৈনিক বাংলায় যান আহসান হাবীবের সঙ্গে দেখা করতে?
হ্যাঁ, ১৯৭২ সালে, একদিন বিকেলে আমি একাই আমার মামা আব্দুল জলিল মোল্লার দিলু রোডের বাসা থেকে দৈনিক বাংলা পত্রিকা অফিসে যাই। একটাই উদ্দেশ্য কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে দেখা করা। গিয়ে হাবীব ভাইকে পেয়ে যাই। তিনি আমাকে নীরবে অবলোকন করেন। আমি বলি, আমার নাম আতাহার হোসেন খান।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমি তো তোমার লেখা ছেপেছি।
ব্যাস, আমার জন্য তার সান্নিধ্য পাওয়া সহজ হয়ে গেল। খুব বেশি আর পরিচয় দিতে হলো না।
ফরিদপুর থেকে এসেছো?
আমি তো এখন ঢাকায় থাকি হাবীব ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি।
থাকো কোথায়?
আমার মামার বাসায়। দিলু রোডে।
আরে, আমিও তো ওখানেই থাকি। ঠিক আছে, বোসো তুমি। আমার সঙ্গেই বাসায় যাবে।
এভাবে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে যায়। আমি প্রায়ই বিকেলের দিকে যেতাম এবং তাঁর সঙ্গে একই রিকশায় চড়ে ফিরে আসতাম। এতে আমার ফেরার ভাড়াটা বেঁচে যেত। হাবীব ভাই আমাকে মগবাজার মোড়ে নামিয়ে দিতেন, আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসতাম।
এরপর হলে সিট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। প্রথমে বেশ অনেকদিন জহুরুল হক হলের অডিটোরিয়ামের ওপর তলায় খাট ফেলে ছিলাম। কবি মোস্তফা মীর, কবি জাহাঙ্গীরুল ইসলাম আমার সঙ্গে ছিলেন। মাঝে মাঝে আমি মামার বাসায় গিয়ে থাকলে কবি আবুল হাসান এসে আমার বিছানায় ঘুমাতেন। কবিতা ছাপানোই যদিও মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু এছাড়াও হাবীব ভাইয়ের মুখোমুখি বসে থাকতেই কেন যেন খুব ভালো লাগত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাঝে মাঝে হেঁটেই দৈনিক বাংলায় চলে যেতাম।
তখন দৈনিক বাংলায় নিয়মিত ছাপা হত আপনার কবিতা?
হ্যাঁ, হাবীব ভাই বেশ গুরুত্ব দিয়ে আমার কবিতা ছাপতেন। আমার ছন্দ-সচেতনতার বিষয়টিকে তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমি নাম বলবো না, একজন বড় কবি, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক সব পুরস্কারই পেয়েছেন। হাবীব ভাই আমার সামনেই তাকে বলছেন, আপনি এতদিন ধরে কবিতা লেখেন এখনও ছন্দটা ঠিক হলো না কেন? শুধু অক্ষর গুনে লিখলে ছন্দ হয় না, কানটাকে শিক্ষিত করতে হয়। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হচ্ছিলাম আমার সামনেই একজন সিনিয়র কবিকে এভাবে বলছিলেন দেখে।
দৈনিক বাংলায় শুধু কবিতাই লিখতেন নাকি অন্য কিছুও লিখতেন। হাবীব ভাই অন্য কিছু লিখতে বলত না? বুক রিভিউ জাতীয় কিছু?
হ্যাঁ, আমাকে দিয়ে অনেকগুলো বুক রিভিউ করিয়েছেন। সেগুলো মূলত আমাকে কিছু টাকা দেবার জন্যই করাতেন। বাংলায় ভর্তি হয়েছি বলে আব্বা তো আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখন আমি ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক বাংলায় স্পোর্টস রিপোর্ট করতাম। এতে করে বেশ কিছু টাকা আসত। তথ্য অধিদফতরের সচিত্র বাংলাদেশেও স্পোর্টস নিয়ে লিখতাম। একবার হয়েছি কি শোনেন, আমার কাছে খাওয়ার পয়সাও নেই। কী করি? তখন হাঁটতে হাঁটতে জহুরুল হক হল থেকে দৈনিক বাংলায় চলে যাই। গিয়ে হাবীব ভাইকে আমার অবস্থার কথা বলি। তিনি আমাকে পকেট থেকে দশটি টাকা বের করে দেন। তখন কিন্তু দশ টাকা মানে অনেক টাকা। আমার তিন দিনের খাওয়ার পয়সা।
সম্পর্কটা কি শুধু পত্রিকা অফিসকেন্দ্রিকই ছিল, কখনো ওঁর বাসায় যাননি?
গিয়েছি। একবার দুবার না, বহুবার গিয়েছি। হাবীব ভাইয়ের বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই আমাকে খবর দিতেন বা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। কত দিন যে ও-বাসায় খেয়েছি।
মঈনুল আহসান সাবের তখন বোধ হয় ছোট।
হ্যাঁ, ও সম্ভবত স্কুলে পড়ত। মজার ব্যাপার কী জানেন, এত যে ওদের বাসায় গিয়েছি, ওকে সম্ভবত আমি একবার কী দুবার দেখেছি। তাও এক ঝলকের জন্য।
আর ভাবি?
ভাবি ছিলেন অমায়িক মানুষ। মায়ের মতো স্নেহ করে খাওয়াতেন। একটা কথা মনে পড়ল, বলে রাখি, এক পত্রিকায় যেহেতু এক নামে বেশি লেখা দেয়াটা দৃষ্টিকটু এবং হাবীব ভাইকেও সমালোচনায় পড়তে হতে পারে তাই আমি ফরমায়েশি লেখাগুলো ছদ্মনামে লিখতাম।
কী ছিল সেই ছদ্মনাম?
ইবনে বতুতা। এই নামে বুক রিভিউগুলো লিখতাম। কারণ প্রায়ই একই পাতায় আতাহার খানের কবিতাও ছাপা হতো।
কার কার বইয়ের রিভিউ করেছিলেন ইবনে বতুতা মনে আছে?
শুধু কবি ওমর আলীর নামটা মনে আছে। অনেক অচেনা অখ্যাত লেখকের বইয়ের রিভিউও করেছি।
শুনেছি ওমর আলীকে তিনি পছন্দ করতেন।
একটু বেশিই পছন্দ করতেন। হাবীব ভাই মনে করতেন ওমর আলী খুব বড় মাপের কবি প্রতিভা। তিনি ওমর আলীকে আল মাহমুদ, শামসুর রাহমানদের সম পর্যায়ের কবি প্রতিভা মনে করতেন।
দাউদ হায়দার সংবাদে আপনার কবিতা ছাপত না?
খুব গুরুত্ব দিয়ে ছাপত। ওর যে কবিতাটা নিয়ে খুব বিতর্ক হয়, ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়’ যেটাতে যিশু এবং মোহাম্মদকে (সা.) কটুক্তি করে জেল খাটে এবং নির্বাসিত হয়, সেইদিন সাহিত্যের প্রথম পাতায় বক্স করে ছাপা হয় আমার কবিতা? দ্বিতীয় পাতায় ছিল ওর সেই কবিতাটা। ওর কবিতাটা খুব বড় ছিল, আমারটাও ছিল একটা বড় কবিতা।
আহসান হাবীবের সহকারী হিসেবে কবি নাসির আহমেদ চাকরি করতেন। আমি শুনেছি নাসির আহমেদের চাকরির ব্যাপারে আপনি তদবির করেছিলেন।
হ্যাঁ। নাসিরের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৭৬ সালে। আমি তখন ‘দৃষ্টি’ নামক একটি পত্রিকায় কাজ করি। আমাদের পত্রিকার জন্য নতুন প্রেস ঠিক হয় নবাবপুরে। ওখানে গিয়ে দেখি বাঁশের মতো শুকনো এবং কাকের মতো কালো এক ছেলে বসে আছে। ও জানায়, আমার নাম নাসির, আমাদের মালিক এখনো আসেনি, মিরপুর থেকে রওনা দিয়েছেন। কাজটাজ শেষ করে নাসিরকে বলি, চলো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসি। একটা মাছ নিয়ে দুজনে ভাগ করে খাই। সেই থেকে ওর সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে একদিন নাসির আমাকে বলে, আহসান হাবীবের সঙ্গে তো আপনার খুব খাতির, আমাকে তাঁর সহকারী হিসেবে চাকরি দিতে বলেন। আমি নাসিরকে নিয়ে যাই হাবীব ভাইয়ের কাছে। হাবীব ভাই বলেন, তুমি শামসুর রাহমানকে বলো। শামসুর রাহমান তখন সম্পাদক। আমি রাহমান ভাইকে বলি। রাহমান ভাই কবি হিসেবে হাবীব ভাইকে হিংসা করতেন। তিনি বলেন, আহসান হাবীবের কোনো লোককে আমি চাকরি দেব না। নাসির তখন বিনা বেতনে, পত্রিকায় লিখে যে বিল পাওয়া যেত, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করতে থাকে। এরশাদের আমলে কী কারণে জানি শামসুর রাহমানের চাকরি চলে যায় তখন আহমেদ হুমায়ূন সম্পাদক হন। তার সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক ছিল। তার খুব বিশ্বস্ত ছিল রেজোয়ান সিদ্দিকী। আমি রেজোয়ানকে বলি, নাসিরের চাকরিটা দিচ্ছ না কেন? রেজোয়ান আমাকে বলে, নাসিরকে বলবেন রোজ সকালে আমার বাসায় গিয়ে বসে থাকবে এবং অফিসে একবার করে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবে, এভাবে ৩৬৫ দিন করতে পারলে ওর চাকরি হবে।
কী সাংঘাতিক কথা!
যাই হোক। পরে বোধ হয় ওর চাকরিটা হয়।
আহসান হাবীবকে নিয়ে বোধ হয় একটা ফুল পেইজ কভার স্টোরি করেন আপনি, সেটা কী রোববারে না পূর্ণিমায়?
সেটা রোববারে। সম্ভবত সেটিই প্রথম বাংলাদেশে কোনো সাপ্তাহিক পত্রিকায় একজন কবিকে নিয়ে ফুল পেইজ কভার স্টোরি। ১৮ পৃষ্ঠার সেই স্টোরিটা আমি নিজেই লিখেছিলাম, সঙ্গে ছিল হাবীব ভাইয়ের একটা ইন্টারভিউ। এটা করার পরে হাবীব ভাই ভীষণ খুশি হন।
তাকে একটা পুরস্কারও তো দেন আপনি এবং রফিক আজাদ?
শুধু আমি এবং রফিক আজাদ না, রবিউল হুসাইন এবং বেলাল চৌধুরীও ছিলেন। আসলে এই তিনজনের নেতৃত্বে একটা সংগঠন গড়ে ওঠে ‘পদাবলী’ নামে। আমরা রোজ সন্ধ্যায় পদাবলীর সভা করতাম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বাড়িতে। জাফর ভাই তখন ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব। আমাদের প্রথম কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানটি হয় মহিলা সমিতি মঞ্চে। সেটা ছিল দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা। এবং সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। অবশ্য এই টিকিট বিক্রির পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর।
পদাবলী পুরস্কারই তো দেন হাবীব ভাইকে?
হ্যাঁ, আমরা আড্ডা দিতে দিতে ঠিক করি শুধু কবিতা পাঠই নয় আমরা একজন কবিকে পুরস্কারও দিব এবং সেই পুরস্কারের মান হবে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ওপরে। কাকে দেয়া যায় পুরস্কার? আমি প্রস্তাব করি আহসান হাবীবের নাম, সঙ্গে সঙ্গে রফিক আজাদ সমর্থন করেন। আর রফিক আজাদ সমর্থন করা মানে সেটা ফাইনাল। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে হাবীব ভাইকে কথাটা জানানো হয়। তিনি যারপরনাই খুশি হন।
দিয়েছিলেন সেই পুরস্কার?
হ্যাঁ, হাবীব ভাইকে দশ হাজার টাকার একটা চেক দেওয়া হয়। সেই সত্তরের দশকে দশ হাজার টাকা কিন্তু অনেক টাকা।
হ্যাঁ হ্যাঁ, সে তো নিশ্চয়ই। দশ হাজার টাকায় তখন ঢাকার শহরতলীতে চার কাঠা জমি কেনা যেত।
হাবীব ভাই পুরস্কার গ্রহণ করে আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।
পাকিস্তান আমলে আহসান হাবীব ছাড়া আর কার কার কবিতা পাঠ্যপুস্তকে ছিল? মানে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জসীমউদ্দীন ছাড়া।
বেগম সুফিয়া কামাল, র্ফরুখ আহমদ, আবুল হোসেনের কবিতা ছিল।
কখনো কি কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে ঢাকার বাইরে সফরসঙ্গী হয়েছিলেন? তখন তো ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অনেক সাহিত্য সম্মেলন হতো।
ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। খুলনার একটা সংগঠন ছিল কবিতালাপ। আহসান হাবীবসহ আমাদের অনেককে কবিতালাপ পুরস্কার দেওয়া হয়। কবি আহসান হাবীব, কবি রফিক আজাদ, কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বিচিত্রার সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী, কবি শিহাব সরকার এবং আমি বাসে করে যাই খুলনায়। সারা রাস্তা রফিক ভাই আর শাহাদাত চৌধুরী নানান অশ্লীল চুটকি বলে মাতিয়ে রাখেন। হাবীব ভাই হাসতে হাসতে সিট থেকে পড়ে যান। ওদের স্টক শেষ হলে আবু হেনা মোস্তফা কামাল শুরু করেন খুব বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুক। এভাবে সারা রাস্তা আমরা আনন্দ করতে করতে যাই।
কোনো মজার ঘটনা আছে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে?
মজার নয় তবে একটা অদ্ভুত ঘটনা আছে। আমি আজও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি। ইত্তেফাকের সাংবাদিক হিসেবে একটা রিপোর্ট করতে আমি কক্সবাজার যাই। বেশ কয়েকদিন থাকতে হয় ওখানে। আমি রোজ বিকালে ঘণ্টাখানেক সৈকতে হেঁটে বেড়াতাম। একদিন দেখি সৈকতে কবি আহসাব হাবীব, সঙ্গে তার কন্যা কেয়া এবং কেয়ার দুই বাচ্চা। আমি তো হাবীব ভাইকে দেখে খুশিতে ‘হাবীব ভাই’ বলে চিৎকার দিয়ে কাছে যাই। তাকে জড়িয়ে ধরবো এইরকম আবেগ আমার। কিন্তু হাবীব ভাই আমার দিকে তাকালেনই না। মনে হলো তার সঙ্গে আমার কোনোকালে দেখাই হয়নি, তিনি আমাকে চেনেনই না।
হলিসউড, নিউইয়র্ক থেকে


শেয়ার FacebookThreadsBluesky

আরও যেসব নিউজ পড়তে পারেন

জগলুল হায়দারের ছড়া : ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ

July 14, 2025

হাওর-সংস্কৃতির নানামুখ :: সুমনকুমার দাশ

July 11, 2025

বাংলা সাহিত্যে ডান-বামের অস্তিত্ব ও সংকট :: জসীম উদ্দীন মুহম্মদ

July 5, 2025

জ্ঞান : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

July 3, 2025

সাম্প্রতিক খবর

  • এক দিনেই ইনস্টাগ্রামে জাংকুকের ফলোয়ার ৬৮ লাখ!

    July 17, 2025
  • সব পারি কিন্তু ক্যামেরার সামনে নাচতে পারি না :: প্রিয়ন্তী উর্বী

    July 17, 2025
  • কারফিউ চলছে, থমথমে গোপালগঞ্জ

    July 17, 2025
  • ইরাকের শপিংমলে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৫০

    July 17, 2025
  • রিজার্ভ বেড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার

    July 17, 2025

BDOUTLOOK.COM

নির্বাহী সম্পাদক : কাদের বাবু

  • হোম
  • দেশ
    • জাতীয়
    • ঢাকা
    • চট্টগ্রাম
    • খুলনা
    • রাজশাহী
    • বরিশাল
    • সিলেট
    • রংপুর
    • ময়মনসিংহ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • মতামত
  • ফিচার
    • শিল্পসাহিত্য
      • কবিতা ও ছড়া
      • গল্প
      • প্রবন্ধ-আলোচনা
      • রম্য
      • শিশুসাহিত্য
      • শিল্পসাহিত্যের খবর
    • তথ্যপ্রযুক্তি
    • লাইফস্টাইল
    • ট্যুরিজম
  • অপরাধ আইন আদালত
  • রাজনীতি
  • স্বাস্থ্য

bdoeditor@outlook.com

  • Privacy Policy
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
    • জাতীয়
    • ঢাকা
    • চট্টগ্রাম
    • খুলনা
    • রাজশাহী
    • বরিশাল
    • সিলেট
    • রংপুর
    • ময়মনসিংহ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • মতামত
  • ফিচার
    • শিল্পসাহিত্য
      • কবিতা ও ছড়া
      • গল্প
      • প্রবন্ধ-আলোচনা
      • রম্য
      • শিশুসাহিত্য
      • শিল্পসাহিত্যের খবর
    • তথ্যপ্রযুক্তি
    • লাইফস্টাইল
    • ট্যুরিজম
  • অপরাধ আইন আদালত
  • রাজনীতি
  • স্বাস্থ্য