জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের আন্দোলনে সরকারদলীয় বাহিনীর গুলিতে মানুষ হত্যার পর তাদের পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘হাসিনা মানবজাতির এক কলঙ্ক। তাঁকে কোনো দিন ক্ষমা করা যাবে না।’
আজ রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। শহীদদের স্মরণে “গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা; সবুজ পল্লবে স্মৃতি অম্লান” শীর্ষক এই কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রথম দায়িত্ব এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা। দ্বিতীয় কাজ হলো শহীদ ও আহত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া। যাঁরা চোখ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাঁদের যেন মর্যাদার সঙ্গে পুনর্বাসন করা যায়। যদি আমরা তা না করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি জানান, আহত ও শহীদদের পরিবারকে সহায়তার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তহবিল গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে একটি ফান্ড রেইজ করব। যতটুকু সম্ভব পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াব। ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে “আমরা বিএনপি পরিবার” সংগঠনটির মাধ্যমে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।’
গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘বহুমাত্রিক মতাদর্শ থাকবেই—কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রে। খালেদা জিয়া সেই বহুদিন আগেই একটি “রেইনবো স্টেট”-এর স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে সব মতের সহাবস্থান থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কে কত ত্যাগ করেছি, সেই বিতর্কে না গিয়েই বলি—এটা স্বার্থপরতার বিষয়। আসল কাজ হচ্ছে জাতিকে একটি উন্নততর অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। শহীদরা আমাদের কাছে যে স্বপ্ন রেখে গেছেন, তা হচ্ছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে একটি সত্যিকার উদার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা এমন একটি নতুন বাংলাদেশ চাই, যেখানে থাকবে না দুর্নীতি, ঘুষ, হত্যা কিংবা দমন-পীড়ন। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে, নিরাপদে, স্বস্তির সঙ্গে জীবন যাপন করতে পারে, সেই রাষ্ট্রের দিকেই আমাদের যাত্রা।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি নতুন সরকারের সূচনা, যা শহীদদের ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করবে এবং বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শহীদদের পরিবারের সদস্যরা—শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন, শহীদ গোলাম নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ শাফাওয়ান আক্তারের বাবা আক্তারুজ্জামান লিটন, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বাবা মাহবুবুর রহমান। তাঁরা বৈষম্যমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা জানান এবং শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব মোর্শেদ হাসান খান এবং ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির।
অনুষ্ঠান শেষে জিয়া উদ্যানে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের নামে প্রায় একশত গাছ রোপণ করা হয়, প্রতিটি গাছে শহীদের নামফলক ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, সারা দেশে একযোগে প্রায় ১০ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।