সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশ
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হলো জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ। দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। বক্তব্য চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও তিনি দৃঢ় মনোবলে বসে থেকেই বক্তব্য শেষ করেন এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিকেল পাঁচটার দিকে আমির জামায়াত তাঁর সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জামায়াত যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে, তার প্রথম প্রমাণ হচ্ছে…” — এই কথার পরপরই তিনি হঠাৎ মঞ্চে পড়ে যান। সঙ্গেসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে সহায়তা করে দাঁড় করান, তবে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে বসে পড়েন। মাইকে ঘোষণা করা হয়, গরমের কারণে আমির সাময়িক অসুস্থ হয়েছেন।
তবুও ডা. শফিকুর রহমান বসেই তাঁর বক্তব্য চালিয়ে যান। তিনি বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করব, ইনশা আল্লাহ। এই লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
জামায়াত আমির তাঁর বক্তব্যে দলের পক্ষ থেকে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “জামায়াত যদি আল্লাহর মেহেরবানি ও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সরকার গঠন করে, তাহলে কোনো এমপি বা মন্ত্রী সরকারি প্লট গ্রহণ করবেন না, ট্যাক্সবিহীন গাড়ি ব্যবহার করবেন না এবং নিজের হাতে অর্থ লেনদেন করবেন না। বরাদ্দ পাওয়া কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে জনগণের কাছে।”
চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাফ বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতিও সহ্য করব না।”

বিশেষভাবে যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তোমাদের সঙ্গে আমরা আছি। আমি আজ জামায়াতের আমির হয়ে নয়, বরং বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একজন হয়ে কথা বলতে এসেছি। আমি শিশুদের বন্ধু, যুবকদের ভাই, বয়স্কদের সহযোদ্ধা। আমি কোনো অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে নয়, বরং পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক—সাধারণ মানুষের পক্ষ হয়ে কথা বলতে এসেছি।”
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমার আফসোস, আমি ২০২৪ সালের বিপ্লবে শহীদ হতে পারিনি। আমি আজীবন রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি, জেল-জুলুমের ভয় করি না। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, ভবিষ্যতের লড়াইয়ে যেন আমি শহীদ হতে পারি।”

বক্তব্যের পর দলের শীর্ষ নেতারা আমিরকে দুই পাশে সহায়তা করে দাঁড় করান। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “গরমের কারণে আমাদের আমির সাময়িক অসুস্থ হয়েছিলেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বক্তব্য শেষ করার তৌফিক পেয়েছেন।”
এই সমাবেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরে জামায়াত। সমাবেশ শেষে জানা গেছে, আমিরে জামায়াতকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য।