গণতন্ত্রের প্রতি আজীবন অবিচল ও আপসহীন একজন মনীষী ছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ছিলেন এমন এক বুদ্ধিজীবী, যিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি সমাজ পরিবর্তনে মৌলিক চিন্তাধারার পথিকৃৎ ছিলেন।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন। প্রয়াত অধ্যাপকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ সভার আয়োজন করে এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টার।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রিসার্চ সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি সংগ্রামে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন ছিলেন অকুতোভয়। গণতন্ত্রে তাঁর বিশ্বাস ছিল অটল, আর রাজনৈতিক সহনশীলতায় তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “আজকের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু অধ্যাপক এমাজউদ্দীন ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি সত্যের পক্ষে অবস্থান নিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি।” তিনি আরও বলেন, “জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী এমাজউদ্দীন জাতীয়তাবাদী দলের ঘনিষ্ঠ হলেও কোনো দলের অন্ধ অনুসারী ছিলেন না। ভুল দেখলে তিনি চুপ থাকতেন না, বরং গঠনমূলক সমালোচনা করতেন।”
বক্তারা বলেন, তাঁর চিন্তা, গবেষণা ও লেখনী গণতন্ত্রকে জাতির জীবনপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। ২০২৪ সালের গণআন্দোলন অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের স্বপ্নের গণতন্ত্রের দুয়ার উন্মোচন করেছে, যদিও তিনি তা দেখে যেতে পারেননি—এটাই সবচেয়ে বেদনার।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের মেয়ে ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নাজনীন, ছেলে জিয়া আহসান, নাতনি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুশরা মাহজাবীন, নাতনি শাফকাত অরিন সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ ম আলী রেজা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নঈম আক্তার ছিদ্দিক, শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মেজবাহউল আজম সওদাগর।
বক্তারা বলেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের অবদান রাষ্ট্র এখনো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর জীবন, দর্শন ও লেখনী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথচলার জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।