মাওলানা আবদুল আউয়াল
মানবজাতি সভ্যতার আলোয় হাঁটলেও এখনো জাহিলি অমানবিকতা তার রূপ বদলে আমাদের সমাজে টিকে আছে। প্রাচীন যুগে মানুষ সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত, আর আজ আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ মানুষকে খুন করে ঠাণ্ডা মাথায়। শুধু সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু হৃদয়ের অন্ধকার দূর হয়নি।
আজকের সমাজে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, গুম, খুন—এগুলো আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত, একটি জটিল অপরাধজগতের অংশ। এই অপরাধচক্রের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়া, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং বিচার বিভাগের শ্লথ গতি।
সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো—অপরাধীদের অনেকেই সামাজিকভাবে স্বীকৃত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও প্রশাসনিকভাবে নিরাপদ। বিচারহীনতা এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি তাদের অপরাধে আরও উৎসাহিত করে। অপরাধীরা যখন দেখে, তারা শাস্তি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারে, তখন তারা আরও বড় অপরাধে লিপ্ত হতে পিছপা হয় না।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: “যে ব্যক্তি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।”
—সূরা মায়িদা: ৩২
এই অমানবিকতার মূল কারণ নৈতিকতার অভাব এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন আর চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয় না, বরং কেবল চাকরির জন্য তৈরি করে। ফলে তৈরি হচ্ছে ‘শিক্ষিত হিংস্র শ্রেণি’, যারা আইন জানে, কিন্তু মানবিকতা জানে না।
করণীয় কী?
দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করা।
অপরাধীর পরিচয় যাই হোক, বিচার যেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকে।
সংবাদমাধ্যমকে সাহসী ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
অপরাধ, তদন্ত এবং প্রভাবশালীদের ভূমিকা জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
পাড়া-মহল্লায় অপরাধ প্রতিরোধ কমিটি, সিসিটিভি, নজরদারি এবং নাগরিক ঐক্য অপরিহার্য।
নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি জাগিয়ে তুলতে হবে।
মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজে আল্লাহর ভয়, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে।
একটি খুন মানে শুধু একটি প্রাণ নয়, বরং গোটা সমাজের বিবেককে হত্যা করা। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তবে কাল হয়তো এই নির্মমতার শিকার হবে আমাদেরই কেউ। আমাদের আওয়াজ উঠাতে হবে—“এ দেশ আলোর দেশ, এখানে অন্ধকারের জায়গা নেই।”