দোয়া—মুমিনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এটি এমন এক অলঙ্ঘনীয় আত্মিক শক্তি, যার মাধ্যমে একজন বান্দা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে। দোয়ার মাধ্যমে দূর হয় অন্ধকার, প্রশান্তি নেমে আসে হৃদয়ে। এমনকি ভাগ্যের রূপও বদলে যেতে পারে আল্লাহর ইচ্ছায়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।”
— (সূরা মুমিন: আয়াত ৬০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর তাকদিরকে পরিবর্তন করতে পারে না।”
— (জামে তিরমিজি: ২১৩৯)
জীবনের প্রতিটি ক্ষণে দোয়ার প্রয়োজন
ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা দোয়া শিক্ষা দিয়েছে—খাওয়া, ঘুমানো, ভ্রমণ করা, ঘর থেকে বের হওয়া, এমনকি বিপদের সময় করণীয় পর্যন্ত। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা কিংবা বিপদ আমাদের জীবনে হঠাৎ করেই এসে পড়ে—যেমন: বিস্ফোরণ, সড়ক দুর্ঘটনা, বজ্রপাত, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা বা লঞ্চডুবি। এসব অঘটন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকাল-সন্ধ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী ও আবশ্যক।
দোয়াটি রাসুল (সা.) সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত পড়তেন
আরবি দোয়া:
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ،
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ، وَمَالِيْ،
اللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ، وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ،
اللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَينِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ، وَعَنْ يَمِيْنِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ،
وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনী ওয়া দুনইয়ায়া, ওয়া আহলি ওয়া মালি।
আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি, ওয়া আমিন রাওআতি।
আল্লাহুম্মাহফাজনি মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা, ওয়া মিন খালফি, ওয়া আন ইয়ামিনী, ওয়া শিমালী, ওয়া মিন ফাওকি।
ওয়া আউজু বিআজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি চাই আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের জন্যও ক্ষমা ও নিরাপত্তা।
হে আল্লাহ! আমার গোপন ত্রুটিগুলো ঢেকে দিন, আমার ভয়ভীতি দূর করে দিন।
আপনি আমাকে হেফাজত করুন সামনের, পেছনের, ডানের, বাম দিক এবং উপর থেকে।
আর আমি আপনার মহত্ত্বের আশ্রয়ে নিচ থেকে হঠাৎ কোনো বিপদে পতিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই।
— (সুনানে আবু দাউদ)
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া দুর্ঘটনার আশঙ্কায়
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি ওয়াল হাদামি ওয়াল গারকি ওয়াল হারিক।
ওয়া আউজুবিকা আন ইয়াতাখাব্বাতানিশ শাইতানু ইনদাল মাওতি,
ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরা,
ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদিগা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওপর থেকে পড়ে যাওয়া, ধসে পড়া, পানিতে ডুবে যাওয়া ও আগুনে দগ্ধ হওয়ার বিপদ থেকে।
আমি চাই, যেন মৃত্যুর সময় শয়তান আমাকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
আমি চাই না, যেন আপনার পথে পলায়নরত অবস্থায় মৃত্যু হয়।
আর আমি চাই না, সাপের কামড়ে মৃত্যু হোক।
— (সুনানে নাসাঈ: ৫৫৩১)
আমাদের জীবনে ঝড়-বৃষ্টি, বিপদ-আপদ আসতেই পারে। কিন্তু একজন ঈমানদার বান্দা সবসময় আল্লাহর স্মরণে থাকে এবং তাঁর দয়ায় আশ্রয় প্রার্থনা করে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এসব দোয়া পাঠ করা আমাদেরকে আত্মিক প্রশান্তি দেবে, আর বিপদের সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে সহায়তা লাভের আশা রাখতেই পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজতে রাখুন, আমিন।