মানুষের হৃদয়ে একধরনের শূন্যতা কাজ করে, যেটা কেবল বস্তুগত কিছু দিয়ে পূরণ হয় না। কেউ ভালোবাসায়, কেউ ধন-সম্পদে, আবার কেউ ক্ষমতা বা ভোগ-বিলাসে সেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই শূন্যতা কেবল আধ্যাত্মিক তৃপ্তির মাধ্যমেই পূরণ হয়। আর এই তৃপ্তির প্রকৃত উৎস হলো আল্লাহর নৈকট্য।
আল্লাহর নৈকট্য মানে কী?
আল্লাহর নৈকট্য মানে হলো তাঁর সান্নিধ্য লাভ, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
“তোমরা তাঁর কাছে পৌঁছানোর জন্য ওয়াসিলা গ্রহণ করো…” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৫)
ওয়াসিলা বলতে বোঝায় এমন সকল মাধ্যম যা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যের দিকে নিয়ে যায়। এটি হতে পারে ইবাদত, দোয়া, ভাল কাজ কিংবা সুন্নাহ অনুসরণ।
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, “ওয়াসিলা হলো, ফরজ ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।” (মাজমু‘আতুল ফাতাওয়া)
এই নৈকট্য আমাদের অন্তরের প্রশান্তি দেয়, জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করে এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করে।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়সমূহ
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণ করাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথ। তাঁর শিক্ষা ও জীবনের আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিচে দেওয়া হলো:
১. ফরজ ইবাদত পালন
নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্ব ও ঈমান—ইসলামের এই পাঁচটি স্তম্ভ কেবল দায়িত্ব নয়; এগুলো আমাদের আত্মার খাবার। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ মজবুত হয়।
২. নফল ও অতিরিক্ত ইবাদত
ফরজ ছাড়াও নফল নামাজ, দোয়া, ইস্তিগফার, তাসবিহ ইত্যাদি আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছানোর দরজা খুলে দেয়।
দোয়া: যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে মন খুলে চাওয়া মানেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা।
ইস্তিগফার : পাপের বোঝা হালকা হয়, অন্তর হয় পবিত্র।
নিয়ত বিশুদ্ধ করা : প্রতিটি কাজ, এমনকি পরিবারে খরচ করাও ইবাদত হয়ে যায় যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
নৈকট্যের পথে বাধা
আল্লাহর নৈকট্য পেতে চাইলে কিছু অন্তরায় থেকে সাবধান থাকতে হবে:
● অপসঙ্গ
খারাপ বন্ধু বা এমন পরিবেশ, যা আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয়, তা আত্মার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভালো সঙ্গ একজনকে সৎ পথে রাখে।
● নিরাশা
অনেকে পাপের বোঝায় হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ কোরআনে বলা হয়েছে:
“আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই তিনি সব পাপ ক্ষমা করেন।” (সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩)
● আল্লাহর গুণাবলি না জানা
যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, রিজিক দেন, ক্ষমা করেন—তাঁর পরিচয় জানা না থাকলে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জন্মায় না। তাঁর নাম ও গুণাবলি জানা মানেই হৃদয়ে আল্লাহর মহত্ত্ব উপলব্ধি করা।
আল্লাহর নৈকট্যের চিহ্ন
আল্লাহর সান্নিধ্য পেলে তা জীবনে প্রতিফলিত হয় কিছু বিশেষ নিদর্শনে:
★ আল্লাহর ভালোবাসা ও মানুষের গ্রহণযোগ্যতা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যদি আল্লাহ কাউকে ভালোবাসেন, তিনি জিবরীল (আ.)-কে বলেন, তিনিও তাকে ভালোবাসেন। তারপর আসমানে ও জমিনে তাকে ভালোবাসা দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি)
★ ইবাদতে আনন্দ অনুভব
যে আল্লাহর ঘন ঘন স্মরণ করে এবং ইবাদতে প্রশান্তি পায়, সে বুঝতে পারে—সে আল্লাহর নৈকট্যে আছে।
★ পরীক্ষা দিয়ে উন্নতি
নবীজি (সা.) বলেন, “যদি আল্লাহ কারো মঙ্গল চান, তিনি তাকে কষ্টের পরীক্ষায় ফেলেন।” (সহিহ বুখারি)
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে এই পরীক্ষাই বান্দাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়।