বর্তমান সময়ে যারা নিয়মিত রম্যগল্প, সায়েন্স ফিকশন কিংবা হরর জনরার লেখা লিখছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিশ্বজিৎ দাস। ছোটদের জন্যও তিনি লিখছেন ইদানীং। পেশাগত জীবনে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক তিনি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দিনাজপুর যাই আমি। সেখানেই মায়াময় শীতের সন্ধ্যায় লেখকের সঙ্গে এক আন্তরিক আড্ডায় মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবার বিষয়ে জানতে চাই।
বিশ্বজিৎ দাস : আমার জন্ম দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার খুবই দরিদ্র একটি পরিবারে। আট ভাই-বোন আমরা। চার ভাই আর চার বোন। চার বোনের মধ্যে তিন বোনেরই ভারতে বিয়ে হয়েছে। আমি ছিলাম পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান। বড় দুই বোনকে তো আমি দেখিইনি। ফুলবাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। সেখানে জিএম স্কুলে মানে গোলাম মোস্তফা স্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি। আমি ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করি। এরপর দিনাজপুর সরকারি কলেজে এইচএসসি পড়তে আসি। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করি। এরকম একটি সময়ে আমার বাবা মারা যান এবং প্রচণ্ড আর্থিক কষ্টে পড়ি। এ সময়ে আমি জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়টা কাটিয়েছি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় এলো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যে টাকা প্রয়োজন, তা জোগাড় করতে পারিনি। ফলে, আমি দিনাজপুর সরকারি কলেজেই অনার্সে ভর্তি হলাম, পদার্থবিজ্ঞানে। অনার্সে ভর্তি হওয়ার সমস্যা যেটা ছিল, তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স করতে সাত বছর সময় লাগত। আমার কোনো বন্ধুবান্ধব সেখানে ভর্তি হতো না। তাছাড়া কেউ পাসও করত না। দেখা গেল ভর্তি হলাম বিশজন, শেষ পর্যন্ত টিকলাম পাঁচজন। এই পাঁচজনের মধ্যে থার্ড ইয়ার অনার্স পাস করেছি দুজন। আমি কষ্ট করেছি৷ পাস করার পরপর আমি দিনাজপুরেরই বীরগঞ্জ উপজেলার নওপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি বেসরকারি কলেজে চাকরি পাই। সেখানে আমি তিন বছর চাকরি করি।
এরপর ২০০৫ সালে আমার বিসিএস হয়। তখন আমি দিনাজপুর সরকারি কলেজে, যে কলেজে আমি পড়াশোনা করেছি সেই কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। তারপর আঠারো বছর কেটে গেল!

বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে প্রশান্ত ভৌমিক দিনাজপুরের নয়াবাদ মসজিদের সামনে
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনি বললেন, আপনার বড় দুই বোনের ভারতে বিয়ে হয়। আপনি তাঁদের দেখেনইনি…
বিশ্বজিৎ দাস : আমার জন্মের আগেই তাঁদের বিয়ে হয়ে যায়। আমি দিনাজপুর কলেজে অনার্স পড়ার সময় আমার সেজো বোন আমাকে মানুষ করেন। তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। মারা গেছেন কিছুদিন আগে। আর বাকি তিন বোনই ভারতে।
প্রশান্ত ভৌমিক : ভাইয়েরা?
বিশ্বজিৎ দাস : আমার দুই বোন, তারপর দুই ভাই, তারপর আবার দুই বোন। তারপর আমি। আমার বড় ভাই কংগ্রেস পার্টি করতেন এবং ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ওনাদের একটা ভালো দিক হলো বাসায় একটা লাইব্রেরি বানিয়েছিলেন। সেই লাইব্রেরিতে বন্ধু-বান্ধবরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বই এনে রাখত। সবাই মিলে পড়ত। আমি লাইব্রেরির সদস্য ছিলাম না। কিন্তু চুপিচুপি সব বই-ই পড়তাম। ক্লাস এইটে থাকতে মাসুদ রানার বইগুলো পড়েছি। আমার কেন যেন বই পড়ার বিষয়ে খুব আগ্রহ ছিল। এক টাকা-দু’টাকা করে জমিয়ে স্টেশনের বই দোকানে চলে যেতাম। বই কিনে সেখানেই পড়ে ফেলতাম।
প্রশান্ত ভৌমিক : বলছেন আপনার বড়ভাই বই পড়তেন। তার মানে পরিবারে বই পড়ার চল ছিল।
বিশ্বজিৎ দাস : হ্যাঁ। পরিবারে পড়ার চল ছিল। আমার যে বড় বোন, সে পড়ালেখায় ভালো ছিল। গান গাইত। সাংস্কৃতিক আবহ ছিল। আমার বড়দা আবার কবিতা লিখত। সেই দেখে আমিও নকল করে কবিতা লিখতাম। সবাই এ নিয়ে হাসাহাসি করত। ছাত্রজীবনে স্কুল-কলেজের কোনো পত্রিকায় লিখেছি কিনা মনে নাই এখন আর। এইচএসসি পাসের পর টুকটাক ঢাকার পত্রিকাগুলোতে লিখতে আরম্ভ করি।
প্রশান্ত ভৌমিক : সচেতনভাবে প্রথম কী লিখেছিলেন, মনে আছে? কিংবা প্রথম প্রকাশিত লেখার কথা মনে আছে?
বিশ্বজিৎ দাস : আমি মূলত লেখালেখি শুরু করি যায়যায়দিন-এর মাধ্যমে। যায়যায়দিন পাঠকদের লেখা নিয়ে পত্রিকা বের করত। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা চাইত। আমি লিখতাম নিয়মিত। আমি আসলে ছাত্রজীবনে নাটক করেছি, আবৃত্তি করেছি, রাজনীতি করেছি, প্রায় সবই করেছি। এর মধ্যে লেখালেখিটাই আমি সুন্দরভাবে করে ফেলতে পারতাম। যায়যায়দিন-এ আমি আমার বাবাকে নিয়ে লিখলাম। সেই লেখাটা ছাপা হওয়ার পর আমার পরিচিতি বেড়ে যায়। পরবর্তীতে মৌচাকে ঢিল-এ লিখেছি। চলতিপত্র নামে একটি পত্রিকা বের হতো। সেখানে এক লাইন-দু’লাইনের লেখা লিখেছি। তখন আসলে ছাপার অক্ষরে নাম ছাপা হবে, এই আনন্দেই লিখতাম। দিনাজপুরের স্থানীয় পত্রিকায় আমি লিখেছি কম। আমি সবসময় ঢাকাকেন্দ্রিক ছিলাম। পত্রিকাগুলো কিনে পড়তাম। মূলত চিঠিপত্র লিখতাম বেশিরভাগ সময়। তখন হাতে লিখতাম। অনেক কষ্ট ছিল। লিখে আবার পোস্টে পাঠাতাম। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হতো, তখন খুব মজা পেতাম। ছোট ছোট লেখা লিখতাম। হয়তো দশটা বাক্যে একটা চিঠি লিখেছি। সেটা ছাপা হয়েছে বিচিত্রায়। স্বাভাবিকভাবেই তখন মানুষ জানতেন যে, দিনাজপুরে একজন বিশ্বজিৎ দাস আছেন।

বিশ্বজিৎ দাসের দুটি বই হাতে
পাঠকপ্রশান্ত ভৌমিক : আমরা যেটাকে মূলধারার সাহিত্য বলি, গল্প বা গদ্য, সেটার শুরুটা কীভাবে?
বিশ্বজিৎ দাস : ছোটখাটো গল্প বা গদ্য লিখতাম। দিনাজপুরের অনেক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বই বের করব এরকম কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। লেখা ছাপা হচ্ছিল পত্রিকায়। আমি আবার ছাপা লেখাগুলো পত্রিকা থেকে কেটে একটা খাতায় লাগিয়ে রাখতাম। আমি চাকরি পাওয়ার পরেও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। একবার মৌচাকে ঢিল ঈদসংখ্যার জন্য লেখা আহ্বান করল। আমি একটা গল্প লিখে পাঠাই প্রায় ৩০০ শব্দে, ‘সময়’ নামে। কিন্তু ঈদসংখ্যায় লেখাটা ছাপা হলো না। আমার খুব মন খারাপ হলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে গল্পটি ঈদ-উল-আজহা সংখ্যায় ছাপা হলো। ওই সংখ্যার সম্পাদকীয়তে এই গল্পটি নিয়ে লেখা হয়, “আমরা এই সংখ্যায় কিছু আন্তর্জাতিকমানের গল্প পেয়েছি, যার মধ্যে বিশ্বজিৎ দাসের ‘সময়’ গল্পটি অন্যতম।” এই লেখাটাই আমার চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন এনে দেয়। আমি বুঝতে পারলাম, আমি এমন কিছু লিখতে পারি, যেটা মানের দিক দিয়ে আলাদা। আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে। আমি তখন প্রাইভেট পড়াতাম। সেটা কমিয়ে দিলাম। আমার স্ত্রীও বইয়ের সমঝদার। তিনিও আমাকে বললেন, তোমার আসলে এই দিকে সময় দেয়া উচিত। দিনাজপুরেও তখন লোকে আমাকে চিনতে লাগল। হয়তো কোনো দোকানে গেছি, আমাকে জিজ্ঞেস করত, ‘আপনিই কি অমুক গল্পের লেখক?’ আমি অবাক হয়ে যেতাম। আমাদের দিনাজপুর সরকারি কলেজের একজন অধ্যাপক ছিলেন । মাসুদুল হক। তিনি আমাকে একদিন কথায় কথায় বললেন, ‘আমাদের বগুড়ার একটি ছেলে আছে প্রকাশক। আপনি যদি বই প্রকাশ করতে চান, তবে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।’ আমি বাসায় এসে দেখলাম দশ-বারোটা বা চৌদ্দটা গল্প আছে আমার। নিজেই সন্দিহান, এ দিয়ে বই হবে কিনা! তাও যোগাযোগ করলাম। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, হবে হবে। আপনি আমাকে পাঠিয়ে দিন।’ পাঠিয়ে দেওয়ার পরে ভদ্রলোক বইটি প্রকাশ করলেন। প্রকাশকের নাম অচিন্ত্য চয়ন। তখন করলাম কী, এই বইটা প্রকাশিত হওয়ার পর আমি নিজেই ১০০ কপি কিনে নিলাম। আমার স্ডেটুন্টরা হুড়মুড় করে বইটা কিনে নিল আমার কাছ থেকে। স্টুডেন্টদের খুব উৎসাহ, ‘আরে! আমাদের স্যারের লেখা বই!’ তখন আমার মধ্যে উপলব্ধি হলো, মানুষ তো আমার লেখা বই পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীরা আমার বই কিনছে। আমার তো আরো বই লেখা উচিত। পরের বছর রহস্যপত্রিকায় আমার ‘মোখলেস ভাই’ সিরিজের লেখাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকল। তখন আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী জলিল স্যার বললেন, ‘তোমার এই লেখাগুলো কপি করে ভালো কোনো প্রকাশককে পাঠাও।’ আমি সব লেখা ১০টা করে ফটোকপি করে ১০টা প্রকাশনীতে পাঠালাম। পাঠিয়ে দেওয়ার পরে অবাক করা একটা বিষয় হলো। অবসর প্রকাশনীর প্রকাশক আমাকে বললেন, ‘আপনি মোখলেস ভাই সিরিজের পাণ্ডুলিপি আমাদের পাঠান। এটা আমরা বের করব।’ ওরা বইটা বের করার সময় প্রচ্ছদ, মেকআপ সবই ওরা করল। আমি বুঝতে পারলাম বড় প্রকাশনীর সাথে কাজ করাটা কেমন আরামদায়ক হয়। এই বইটা প্রকাশের পর সবাই আমাকে অন্যরকম নজরে দেখা শুরু করলেন।
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনার প্রথম বই ‘সময়’ থেকে আজকে আপনি ৩২টি প্রকাশিত বইয়ের লেখক। এই সম্পূর্ণ জার্নিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
বিশ্বজিৎ দাস : ‘সময়’ বইটি সম্পূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ। এই বইটি প্রকাশের পর দারুণ সাড়া পেয়েছিলাম। প্রথম প্রকাশের বই শেষ হয়ে যাওয়ার পরে শফিক হাসান তাঁর ‘প্রকাশ’ থেকেও বইটি বের করেন। সেগুলোও শেষ হয়ে যায়। এখন অচিন্ত্য চয়ন আবার ‘সময়’ বইটি আনতে যাচ্ছেন। এবার এই তৃতীয় মুদ্রণে কিছু নতুন গল্প সংযোজন করা হয়েছে। এখন বিষয়টা হলো ‘মোখলেস ভাই উপাখ্যান’ সিরিজটি বের হওয়ার পর আমার মধ্যে এক ধরনের উপলব্ধি আসে। আমি বুঝতে পারি ‘সময়’ বা এই ধরনের ছোটগল্পের বই যতই বিক্রি হোক না কেন, অনেক বেশিসংখ্যক পাঠকের হাতে পৌঁছানো একটা অসম্ভব ব্যাপার। যদি না আমি জোর করে পাঠকের হাতে পৌঁছাই। কিন্তু মোখলেস ভাই টাইপের বইয়ের পাশাপাশি যখন কিশোর উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন এসব বই লিখেছি; তখন তা পাঠকের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। যেহেতু আমি পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক, সেহেতু লোকে আমার কাছে এক ধরনের লেখা আশা করে। আমি নিজের লেখার ধারা পরিবর্তন করলাম। আমি তখন ‘সময়’ ধরনের গল্প না লিখে মূলত রম্য, সায়েন্স ফিকশন এসব ধরনের লেখায় মনোযোগ দিলাম। তাই বলে আমি ছোটগল্প লেখা থামাইনি। ছোটগল্প আমি লিখেছি প্রচুর। সমস্যা হলো ছোটগল্প আর প্রকাশকরা সেভাবে প্রকাশ করতে চান না। তারা রম্যগল্প, সায়েন্স ফিকশন, কিশোর উপন্যাসের বই বের করতে রাজি; কিন্তু সিরিয়াস ছোটগল্পের বই বের করতে রাজি না। অবশ্যই তাঁরা পাঠক কী চায় সেটা ভেবেই বই প্রকাশ করবেন। ফলে আমি আগের থেকে আমার লেখার ধারাটা পরিবর্তন করলাম। প্রতি বছর আমি একটা সায়েন্স ফিকশন বই লেখা শুরু করলাম। একটা হাসির গল্পের বই লিখতাম। একটা মোখলেস ভাই উপাখ্যান লিখতাম। আমি ভূতের গল্প লিখেছি বেশি। আমি কিছু ক্ষেত্রে আমার ব্যর্থতাই বলব বেশি। আমি তো চেয়েছিলাম ‘সময়’-এর মতো সিরিয়াস টাইপের ছোটগল্প লিখতে, উপন্যাস লিখতে। এমন অনেক লেখক আছেন, যাদের সিরিয়াস লেখা পাঠক পড়ে। নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে বলব, আমার সিরিয়াস লেখা পাঠক পড়েননি।

বিশ্বজিৎ দাসের অটোগ্রাফ নিচ্ছেন পাঠক
প্রশান্ত ভৌমিক : লেখালেখির অনুপ্রেরণার কথা জিজ্ঞেস করলে আপনি কার কথা বলবেন?
বিশ্বজিৎ দাস : লেখালেখির অনুপ্রেরণা আমি প্রথম পেয়েছি আমার বড়ভাইয়ের কাছ থেকে। আমার বড়ভাই আমাকে ‘যায়যায়দিন’ পড়তে শিখিয়েছে। ‘যায়যায়দিন’-এ যেসব রাজনৈতিক আলাপ ছিল, পড়ত। আরো নানান পত্রিকা পড়ত। আমার সঙ্গে আলোচনা করত। আর নানা লেখকের মতবাদ সম্পর্কে আলোচনাগুলো আমার বড়ভাই আমার সঙ্গে করতেন। ছোটবেলায় অতশত বুঝতাম না। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম, লেখকরা রাজনীতি সচেতন হয়। এবং লেখকদের সম্পর্কে জানতে পারাটা আনন্দের বিষয়। আমার বড় ভাইয়ের মূল কথা ছিল, ‘এসব বড় বড় লেখকের কাছে আমরা কখনো পৌঁছাতে পারব না।’ এই ব্যাপারটা আমার কাছে এক প্রকার জেদের মতো হয়ে যায়, এ সমস্ত লোকের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায়? সেটা সফল হয়েছি লেখালেখির মাধ্যমে। অনেক লেখককে চিনি, তাঁরা আমাকে চেনেন। আসলে বলতে গেলে, আমার বড়ভাই আমার জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে জড়িয়ে আছেন। তারপরে আমার স্ত্রী। সে আমার বই পছন্দ করে। আমাকে সব সময় উৎসাহ দেয়। আমি যখন সারাদিন লিখি, আমার স্ত্রী আমাকে বারবার চা-নাশতা পাঠায়। কোনো বিরক্তি দেয় না। ও হচ্ছে আমার প্রথম পাঠক। কোথায় কী লিখছি, কাকে কোন পাণ্ডুলিপি দিচ্ছি, এসব ব্যাপারে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করি।
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনার পেশাগত জীবনে আসি। আপনি বললেন, দিনাজপুর সরকারি কলেজ দিয়েই আপনার সরকারি চাকরি জীবন শুরু। পদার্থবিজ্ঞান পড়ান আপনি। অনেকেই পদার্থবিজ্ঞানকে বলেন কাঠখোট্টা বিষয়। এমন একটা বিষয়ে পড়ে এখন পড়াচ্ছেন। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে যদি কিছু বলেন।
বিশ্বজিৎ দাস : এটার পেছনে ভূমিকা আছে শফিক রেহমান স্যারের। শফিক রেহমানকে তো চেনেন, মৌচাকে ঢিল-এর সম্পাদক। ‘যায়যায়দিন’-এ যারা নিয়মিত লিখতেন, তাঁদের নিয়ে প্রথম তিনি লেখক সম্মেলন করলেন। সেখানে আতাউস সামাদ এসেছিলেন, হানিফ সংকেত এসেছিলেন, হুমায়ূন আহমেদ স্যার এসেছিলেন। শফিক রেহমান স্যার নিজেই বললেন, প্রথম জীবনে ওনার স্ত্রী চাকরি করতেন আর তিনি শুধু লেখালেখি করতেন। এরপর উপলব্ধি করলেন, শুধু লেখালেখি করে পেট ভরবে না। আপনি যতই বড় লেখক হোন না কেন, প্রকাশকরা আপনার টাকা দেবে না। আপনি যদি ভাবেন লেখালেখির টাকা দিয়ে বাজার করবেন, জীবনে পারবেন না। ভালোভাবে জীবন চালাতে হলে ভালো প্রফেশনে ঢুকতে হবে। শফিক রেহমান স্যারের এই কথাগুলো আমার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। তিনি এটাও বলেছিলেন, যদি সম্ভব হয় এমন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিবেন, যিনি আয় করেন। দুই হাতের ইনকাম দিয়ে ভালো চলা সম্ভব। যাতে করে কখনো আপনি যদি ডাউন করেন, সে চালাতে পারবে সংসারটা। শফিক রেহমানের এই কথাগুলোই আমার জীবনে গভীর রেখাপাত করে। আমি একজন কর্মজীবী মহিলাকেই বিয়ে করি। যাকে বিয়ে করি সেও লেখালেখি পছন্দ করে। লেখালেখির জগতে আমাকে সবসময় উৎসাহ দেয়। শফিক রেহমান স্যারের ওই কথাটা আমাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াত, লিখে সংসার চালাতে পারবেন না। যদিও আমি সরকারি চাকরি পাওয়ার পর বেশ কিছুদিন লেখালেখি থেকে দূরে ছিলাম। এই শফিক রেহমান স্যারের লেখা সম্পাদকীয় আমাকে আবার লেখালেখির জগতে ফিরিয়ে আনে। এখন মনে হয়, যদি আরো কিছুদিন আগে লেখালেখি শুরু করতে পারতাম, আরো অনেক বেশি লিখতে পারতাম। কর্মজীবনের কথা বলতে গেলে ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে আমি ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদান করি। আমার সরকারি চাকরিতে বয়স শেষ হয়ে গিয়েছিল। নানা চাকরিতে চেষ্টা করেছি। কোথাও রিটেন হলে ভাইভা হয় না, এমনও হয়েছে। আনসারের চাকরিটা আমি টাকার অভাবে নিতেই পারলাম না। আমার চাকরি হয়ে গেছিল। আমাকে বলা হয়েছিল ১৫,০০০ টাকা ডিপোজিট রাখতে। তখন আমার কাছে ১৫ টাকাও ছিল না। তখন একটা বেসরকারি কলেজে চাকরি করতাম। সেই টাকা দিয়ে একা একা কোনোমতে চলতে পারতাম। কিন্তু আমার দরকার ছিল একটা স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন। বুঝতে পেরেছিলাম, এই বেসরকারি কলেজ আমার জন্য না। আমাকে ভালো জায়গায় যেতে হবে। আমি ২৪তম বিসিএসের সময় বেশ মনোকষ্টে ছিলাম। কারণ, আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গিয়েছিল। এবং আমি হতাশায় ভুগতাম, আমি কি একটা ভালো সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য না? এর আগের বারও আমি রিটেনে টিকে ভাইভায় আউট হয়ে গিয়েছি। ২০০৫ সালে বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরি পেলাম সেই কলেজে, যেখানে আমি পড়াশোনা করেছিলাম। বুঝতে পারলাম, এতটাও অযোগ্য আমি ছিলাম না। উপলব্ধি করলাম, ওপরওয়ালা আমাকে নিজের কলেজেই সেবা করতে পাঠিয়েছেন। এরপর আমার স্ত্রীর সাথে মিলে সংসারটা গুছিয়ে নিই এবং আবার লেখালেখিতে ফিরে আসি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, সরকারি চাকরি পাওয়াটা আমার জীবনে একটা বিশাল টার্নিং পয়েন্ট। আমি যখন ক্লাস নেই, চেষ্টা করি মজার মজার গল্প বলে পদার্থবিজ্ঞানের মতো কঠিন বিষয়কে সহজ করে তোলার।

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হককে
নিজের লেখা দুটি উপহার দিচ্ছেন বিশ্বজিৎ দাস
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনার প্রিয় পাঁচজন লেখকের কথা বলতে বললে কাদের কথা বলবেন?
বিশ্বজিৎ দাস : সবার আগে বলব শংকরের কথা। শংকরের ‘চৌরঙ্গী’ আর ‘ঘরের মধ্যে ঘর’ এই দুটো বই পড়ে আমার জীবনদর্শন পরিবর্তন হয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা ভালো লাগত। কাজী আনোয়ার হোসেনকে পড়ে পড়ে বড় হয়েছি। কাজী আনোয়ার হোসেন অবশ্যই প্রিয় লেখক। রকিব হাসানকেও খুব ভালো লাগে। সমরেশ মজুমদারের লেখা ভালো লেগেছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখাও ভালো লাগে। এতজনের মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম বলতেই ভুলে গেছি। পাঁচজনের বেশি হয়ে গেল। এঁদের সবাইকে ছাপিয়ে আমার একজন জাপানি লেখকের লেখা এখন সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে, হারুকি মুরাকামি। চমৎকার লেখেন। পাশাপাশি অনুবাদে জাপানি লেখকদের কয়েকটা থ্রিলার পড়েছি, ওগুলোও ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের একজন লেখক মুরাকামির মতো করেই লেখেন, আলভী আহমেদ। তাঁর লেখাও আমার ভালো লাগে। আলভী আহমেদ যদিও মুরাকামির বাংলা অনুবাদ করেছেন, কিন্তু তাঁর উপন্যাসও সুন্দর।
প্রশান্ত ভৌমিক : এতক্ষণ বললেন সবসময়ের প্রিয় লেখকদের কথা। বর্তমান সময়ে যারা লেখালেখি করছেন, এঁদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? কেমন পড়ছেন?
বিশ্বজিৎ দাস : বর্তমান সময়ের লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে আলভী আহমেদকে। তার বাইরে ভালো লাগে আহমেদ খান হীরকের লেখা। আফরোজা বেগমের লেখাও ভালো লাগে। আসলে হুট করে নাম মনে করা কঠিন। শফিক হাসানের রম্য রচনা ভালো লাগে। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ‘শেষ মৃত পাখি’ পড়েছি, বেশ ভালো লেগেছে। সায়ন্তনী পুততুন্ড’র লেখা পড়েও ভালো লেগেছে।
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনি নিয়মিত লিখছেন বাংলাদেশি পত্র-পত্রিকায়, বই বেরোচ্ছে। এদিকে শফিক রেহমান বলেছেন, ‘লেখালেখি করে পেটের ভাত জোগাড় হবে না।’ সেই বাস্তবতা আপনি নিজেও দেখেছেন। আজকে এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কী মনে হচ্ছে, শফিক রেহমান কি ঠিক বলেছিলেন?
বিশ্বজিৎ দাস : লিখতে গেলে মানসিক শান্তির প্রয়োজন আছে। সেই মানসিক শান্তিটা আসে পরিবার থেকে। পরিবার থেকে যদি সাপোর্ট না পাওয়া যায়, তাহলে ভালো লেখা সম্ভব না। লিখতে বসার পর স্ত্রী বাজারের থলি নিয়ে যদি হাজির হয়, তখন আর লেখায় মন বসবে না। পারিবারিক শান্তি বজায় রাখার জন্য সবার আগে প্রয়োজন অর্থ। আমি মনে করি, আমার অনেক অর্থ উপার্জন করার দরকার নেই। শুধু পারিবারিক শান্তি বজায় রাখার জন্য যেটুকু অর্থ প্রয়োজন, সেটুকু হলেই চলবে। আগে সেই অর্থের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে, তারপরে ঠিকভাবে সাহিত্যচর্চা করা যাবে। এটা মানতে হবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাহিত্যচর্চা একটা শখ, পেশা নয়। সবাই তো আর সাদাত হোসাইন হতে পারবে না। আমি বলতে ভুলে গেছি, সাদাত হোসাইনের লেখাও আমার খুব ভালো লাগে। আমার মনে হয় সাদাত হোসাইনের এত জনপ্রিয় লেখক হওয়ার পেছনে তাঁর লেখার পাশাপাশি তাঁর প্রকাশক এবং পাঠকদের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। সবচেয়ে বড় কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও একটা ভূমিকা আছে। কিন্তু বাকি সবার ক্ষেত্রে একটাই কথা, শুধু লিখে পেট ভরবে না। আর যদি কেউ বলে, আমি শুধু লিখেই জীবন ধারণ করব তাঁকে শুধু সাধনা করতে হবে এক যুগ। এক যুগ পরে পাঠক হয়তো তাঁকে স্বীকৃতি দেবে, হ্যাঁ, উনি তো ভালোই লেখেন। ততদিন তো লেখককে খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। আর তার জন্যে অর্থের প্রয়োজন। কোটি-কোটি টাকার হয়তো দরকার নেই, কিন্তু জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় অর্থের দরকার। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করা উচিত, সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যেন এই অর্থ উপার্জনের ব্যাপারটা শেষ হয়। রাতে যেন লিখতে বসতে পারে। না হলে হবে না। আর দ্বিতীয় কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কমাতে হবে। শান্তির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচুর অশান্তিও ডেকে আনতে পারে। সাদাত হোসাইনের ব্যাপারটাই দেখুন, তিনি পত্র-পত্রিকাতে প্রায় লেখেন না। সারা বছর খেটেখুটে দুটো কি তিনটি উপন্যাস লেখেন। এই বইগুলোর রোজগার দিয়ে তাঁর সারা বছর চলে যায়। এই লেখা লিখতে হলেও পরিশ্রমী হতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো কিছুতে একটু ভাগ্যেরও প্রয়োজন আছে। যেমন- অবসর প্রকাশনীর একটা মোটা বই আছে ‘রাশিয়ার মেয়ে’ বা ‘রাশিয়ার চিঠি’ নামে। বইটা অসম্ভব ভালো, দু’হাজার টাকা দাম বোধহয়। অনেক বেশি দামের কারণে বইটা কিনবেই না অনেকে। একই ধরনের একটা বই ধরা যাক যদি মুরাকামি লিখতেন, নামেই চলত। আবার, যদি সেবা প্রকাশনী থেকে ভালো গোয়েন্দা বইও লেখা যায়, তাও চলবে এমন নয়। এ কারণেই বলা, লেখালেখির পাশাপাশি রোজগারের বিকল্প একটি পথ অবশ্যই থাকা উচিত। সেটা সৎ পথে। আবার যদি এমন হয়, আমার বউ চাকরি করে আর আমি ঘরে বসে বসে লিখি, তাহলেও শান্তি নেই। কিছু টাকা নিজেরও আয় করতে হবে।

অমর একুশে বইমেলায় বিশ্বজিৎ দাসের বই পাঠক
প্রশান্ত ভৌমিক : দশ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিশ্বজিৎ দাস : এরকম কোনো কিছু ভাবি না। এখন পর্যন্ত আমি ভাবি যে, আমি একজন এন্টারটেইনার। মানুষকে বিনোদন যুগিয়ে যাই। আমার ভূতের গল্প পড়ে কেউ বিনোদিত হচ্ছে, কেউ হাসির গল্প পড়ে বিনোদিত হচ্ছে, কেউ বা সায়েন্স ফিকশন পড়ে বিনোদিত হচ্ছে- এটুকুই। আগামী দশ বছর পরে যে আমি বিশাল কিছু হয়ে যাব ব্যাপারটা এমন নয়। আমার বই যে কালকেই মারমার কাটকাট বিক্রি শুরু হবে এমনটা আশা করা যায় না। সেরকম সিচুয়েশন নেই। কেউ একেবারে বিখ্যাত হয়ে যাবে, পদক পাবে, এসব কষ্ট কল্পনা। মূলত এগুলোতে রাজনীতিকরণ, সিন্ডিকেট এসব ঢুকে গেছে। যার জন্যে লেখালেখিটা মূলত মনের শান্তির জন্যেই করে থাকি। দশ বছর পর বিশাল কিছু হয়ে যাব, এসব ভেবে লিখি না।
প্রশান্ত ভৌমিক : ফেসবুকে দেখতে পাই, আপনার ছাত্র-ছাত্রীরাই আপনার বইয়ের একটা বিশাল প্রমোশন করে দিচ্ছে। দিনাজপুরে এসেও দেখলাম, পাশাপাশি দিনাজপুরের অন্যান্য লেখকরাও এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন আপনার জনপ্রিয়তা। তাঁদের মতে, দিনাজপুরের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের লেখক আপনি। এই ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখেন?
বিশ্বজিৎ দাস : পুরো ব্যাপারটার মধ্যেই আমার পরিশ্রম রয়েছে। আমার প্রথম বই ‘সময়’ যখন বের হয়, তার ক্রেতা-পাঠক ছিল আমার ছাত্র-ছাত্রীরাই। তখন আমি বুঝতে পারলাম, আমার পাঠকেরা আমার কাছেই আছে। আমি জানি, দিনাজপুরের বা ঢাকার কোনো সাহিত্য সম্পাদককে যদি আমার একটি বই দেই, তিনি পড়বেন না। পড়ার সময় কোথায় তাঁর! বইয়ের মূল পাঠক কিশোর-কিশোরীরা। যারা বই পড়ুয়া তাদের আলাদা ধাঁচ আছে। আমি দেখলাম ছাত্র-ছাত্রীরা এসব বই পড়ে বেশি। আমি ওদের কথা ভেবে বই লেখা শুরু করলাম। ওদেরকে উৎসর্গ করলাম। পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় ওদের নাম ব্যবহার করলাম। গল্পটা ছাপা হওয়ার পর ওদের জানালাম, ‘এই দেখো, তোমার/তোমাদের নাম আমি ব্যবহার করেছি।’ তখন সেই ছাত্র বা ছাত্রী পড়তে শুরু করল, ‘দেখি তো স্যার আমার নামে কী লিখেছেন!’ আমি এক যুগ ধরে এভাবে লেখালেখি করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের গল্প পড়ে শুনিয়েছি, ওদের বই উপহার দিয়েছি। যাতে করে তারা বইটা পড়ে আরো বই পড়তে উৎসাহিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে তো এমন অবস্থা হয়েছে, বইগুলোর নামের ভারে আমার নামটাই চাপা পড়ে গেছে। মোখলেস ভাই জনপ্রিয় সিরিজ হয়েছে। আমি আসলে লিখতে লিখতেই লেখক। এই মন্দার বাজারেও আমি প্রতি বছরে অন্তত ১০০ জন পাঠক তৈরি করি। এরা সবাই আমার ছাত্র-ছাত্রী। এরা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। যেমন আমি একটা মেয়ের কথা বলব, ওর নাম হচ্ছে নাবা। ওর নামটা আমার এত পছন্দ হয় আমি তাকে বলি, ‘একটা চরিত্রে আমি তোমার নামটা নেব।’ ও বলল, ‘ঠিক আছে স্যার, নিয়েন।’ ঠিকই তার নাম দিয়ে লিখে ফেললাম ‘নাবা’। যদিও কাহিনির সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই। সেই মেয়ে চলে গেছে চট্টগ্রাম মেডিকেলে। বইটা প্রকাশিত হওয়ার পর তাকে যখন জানালাম, সেই মেয়েটাই এই বইয়ের প্রমোশন করেছে। এই মেয়েটাই কিন্তু আরো ২-৪ জনকে বই পড়তে শিখিয়েছে। এভাবেই আমার পাঠক ছড়িয়ে গেছে। এটা কিন্তু এক দিন দুই দিনে হয়নি। আমি আজকে শুরু করলাম, কালই আমায় পাঠক চিনবে এমন নয়। দ্বিতীয় কথা, আমি ঢাকায় থাকি না, থাকি দিনাজপুরে। প্রকাশক কাদের বাবু আমাকে বলেছেন, ‘আপনি যদি ঢাকায় থাকতেন, আপনি আরো বড় বড় লেখকদের পেছনে ফেলতে পারতেন।’ সেটা হয়তো একটু বেশি বেশিই বলেছেন। আমি আমার মতোই থাকতে চাই। লেখালেখি করতে করতেই আমি যে অসংখ্য পাঠক তৈরি করেছি, এটা আমি বিভিন্ন জায়গায় গেলে টের পাই।
প্রশান্ত ভৌমিক : আপনার স্ত্রীর কথা তো শুনলাম। আপনার সন্তানকে নিয়ে কিছু বলুন।
বিশ্বজিৎ দাস : আমার একটাই ছেলে, দীপ। আমার লেখা বই মোখলেস ভাইয়ের সম্পর্কে সে আলোচনা করে মাঝে মাঝে। তাকে কেন্দ্র করে আমি কিছু গোয়েন্দা গল্প লিখেছি, সেগুলো এখনো বই আকারে বাজারে আসেনি। আমার ছেলেটার জন্য আশীর্বাদ করবেন সবাই।
প্রশান্ত ভৌমিক : আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
বিশ্বজিৎ দাস : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।