ধারণার থেকেও দ্রুত গলছে উত্তর মেরুর বরফ। বিজ্ঞানীরা এখন আশঙ্কা করছেন যে, ২০৩০-এর দশকেই উত্তর মেরু বরফহীন হয়ে যাবে। নতুন এক গবেষণা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, আমরা এতদিন ভবিষ্যৎ জলবায়ু সংকটের যে প্রভাবের আশঙ্কায় ছিলাম, তা এখন বাস্তব হওয়ার একদম কাছাকাছি রয়েছে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন।
খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার (৬ জুন, ২০২৩) ন্যাচার জার্নালে ওই গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় যে, ২০৪০ সালের আগেই এমন অবস্থা দাঁড়াবে যে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আর্কটিক সাগরে কোনো বরফ থাকবে না। এমনকি এখন থেকেই যদি দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়, তাহলেও এই পরিণতি ঠেকানো যাবে না। ২০৫০ সালের মধ্যেই পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়ে আর্কটিক সাগর বরফ শূন্য থাকবে।
১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তত্ত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়া তারা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যও ব্যবহার করেছেন। এতে তারা দেখেছেন যে, আগের মডেলগুলোতে বরফ গলার হারকে কম করে দেখানো হয়েছিল। বরফ গলার পেছনে মানব সৃষ্ট কারণগুলিকে কম দায়ী করা হয়েছিল সেসব মডেলে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও পোহাং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সেউং-কি মিন বলেন, আমরা বিস্মিত হয়েছি যে, আমাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের এত এত চেষ্টার পরেও আমাদেরকে এখন গ্রীষ্মকালে একটি বরফ-মুক্ত আর্কটিক সাগর দেখতে হবে।
আর্কটিক বরফ শীতকালে তৈরি হয় এবং তারপর গ্রীষ্মে গলে যায়। সাধারণত চক্রটি আবার শুরু হওয়ার আগে সেপ্টেম্বরে তার সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছায়। তবে দিন যত যাচ্ছে এই অবস্থা বদলাচ্ছে। প্রথম দিকে শুধু সেপ্টেম্বর মাসই বরফমুক্ত থাকবে। তবে আস্তে আস্তে তা গোটা গ্রীষ্মকালের জন্যই সাধারণ অবস্থায় পরিণত হবে। এমনকি দূর ভবিষ্যতে শীতকালেও বরফ কম দেখা যাবে আর্কটিকে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৮০ সালের পরপরই পুরোপুরি বরফহীন হয়ে যাবে আর্কটিক সাগর। যদি এই হারে জ্বালানি তেল পুড়ানো হয় এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী অন্যান্য কার্ক্রম অব্যাহত থাকে তাহলে এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই। উল্টো, সামনের দিনগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে উত্তর মেরু হয়ত ধারণারও পূর্বে বরফহীন হয়ে পড়বে।